শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৪
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত সংখ্যার পর), ওনার কথামত ভোলায় সেদিনই রাতে পাড়ি জমিয়েছিলাম। বাবার বাসায় বসে বসে আমি আওয়ামীলীগ করি বাবা যেন তেমন পছন্দ করেননি। বাবা বললেন, আমি মুসলিম লীগের লোক, তুই আমার বাসায় ও আমার বৈঠক খানায় বসে আওয়ামীলীগ করিস ? আমি বললাম, বাবা, ভিন্ন লোকের ভিন্ন মতবাদ, আপনি মুসলিম লীগ করেছেন বলে আমাকে তা করতে হবে ? আপনি যেটা পছন্দ করেন করেছেন, আমি যেটা ভালবাসী সেটা করব। বাবা রেগে গিয়ে বললেন তুমি তো একজন বড় বক্তা তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই।
আমি বাবার বাসা থেকে চলে গেলাম। এদিকে কর্নেল বিগ্রেডিয়াররা আমাকে খুঁজছে, কাঁহা খান বাহাদুর কা বেটি। আমি ওদের ভয়ে ভোলা থেকৈ আমার স্বাী ছেলেরাসহ চল্লিশ মাইল দূরে আত্মগোপন করে থাকলাম। দূরে যাওয়ার আগে ভয়ে আতংকে বাবার কাছে গিয়ে আশ্রয় ভিক্ষা চেয়েছিলাম। বাবা বললেন, তুই দূরে গিয়ে গ্রামে কিংবা চর অঞ্চলে থাক, এখঅনে টাউন এলাকায় মিলিটারী আমার বাসায় এলে আমি তোকে বাঁচাতে পারব না। খুব দুঃখ পেয়ে অনেক দূর চর অঞ্চলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম।
মিলিটারীরা পীস কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে জিজ্ঞাসা করল, এখঅনে খান বাহাদুর সাহেবের মেয়ে আওয়ামীলীগ করে ও মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং দেয় ? পীস কমিটির চেয়ারম্যান আমার বাবারই একজন ভক্ত উকিল। সে বলল, খান বাহাদুরের মেয়ে মহিলা সমিতি করে সে একজন বয়স্ক মহিলা, তবু তারা বিশ্বাস করল না, আমার পিছনে লেগে থাকল। কোন মৌলভী সাহেব নাকি আমার নাম বলেছিল।
আমার ছেলেরা এক এক করে লুঙ্গি পরে ঢাকায় পাড়ি জমাল। বেইলি রোডে গ্যাজেটেড অফিসার্স হোস্টেলে। আমি পড়ে থাকলাম গ্রামে-গঞ্জে চর এলাকায়। আমার বড় ছেলে খবর পেয়ে দু-দুবার আমাকে দেখে এল। শেষবার শুনি যে মিলিটারী খুব ধরপাকড় করছে। ও আমার ওখানে এসে আমাকে শাড়ী পরিয়ে ঘোমটা টেনে প্রথমে লঞ্চে বরিশাল, তারপর থেকৈ স্টীমারে ঢাকা সদর ঘাটে এসে বেবী ট্যাক্সী করে তেজকুনি পাড়ায় তুলল।
চাল, ডাল, মাছ তরকারী কিনে আগে থেকেই ওখানে ঔ বাড়ী ভাড়া করেছিল। জায়গাটা এত খারাপ, এ রকম জায়গা আমি জীবনেও দেখিনি। আমি ভোলা মহকুমা শহরে লালিত পালিত হয়েছি। ভোলায় আমাদের পাড়াটার নাম উকিল পাড়া, সমস্ত উকিলদের আস্তানা। সভ্য, শিক্ষিত মার্জিত লোকের বসবাস। এই তেজকুনি পাড়ায় সভ্য জগতের কোন মিল নেই। আমার মনে হয় যেন আন্দামান দ্বীপ। সারাদিন ঘরে বসে থাকতাম। ছোট মেয়েটিকে আদর যত্ন করতাম। তেজকুনি পাড়ার লোকেরা এত আনস্যোসাল, কেউ কারও বাড়ীতে যাওয়া-আসাও করে না। আমি অনেক গ্রামে-গঞ্জেও থেকেছি আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে দেখেছি, সামাজিকতার আদি রুপ ভদ্রতার কিছুটা মুখোজ। কিন্তু ঢাকায় এই তেজকুনি পাড়ায় উনিশশ সত্তর সালে যা দেখেছি ভিন্ন পৃথিবী আজব কান্ড কারখানা। আওয়ামীলীগের কোন লোকের সাথেও সেখানে পরিচয় হয়নি।
(চলবে—————)