সামগ্রিক গ্রাম উন্নয়ন
গ্রাম উন্নয়ন এর লক্ষ হওয়া উচিত মানুষের জীবনের সামগ্রিক উন্নয়ন করা। গ্রাম উন্নয়নের ধারনা বা পরিকল্পনা গ্রহনের ক্ষেত্রে গ্রামের গরীব মানুষের কতগুলি নুন্যতম বাচার প্রয়োজন মেটানো। যার একটা ছোট্ট সম্ভাব্য তালিখা হতে পারে যেমন- খাদ্য, পুষ্টি, বস্ত্র, আশ্রয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকুরী, বৈষম্য অবসান করা এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রকে নিশ্চিত করা। বর্তমানে আমাদের গ্রামীণ সমাজের জনগণের প্রদেয় সুযোগ সিুবিধাগুলি বর্তমান আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবী রাখে।
এই প্রবন্ধ শুরুর ক্ষেত্রে বলতে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গ্রামীণ জনপদের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রথমে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ। এ ছাড়া বর্তমান সরকার পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ এর ক্ষেত্রে, গ্রাম হতে শহর এই স্লোগান এর ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজাতে বলেছেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট গ্রাম শহর সম্পর্কের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিশ্লেষণে সাধারণভাবে বলা যায়, শহর ও গ্রামের মানুষের মধ্যে আয় ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমন করে শিক্ষা, হাসপাতাল, শিল্প, এমনকি সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে মানুষ আজ শহরমুখি হয়ে পড়েছে। গ্রামের সমাজ পিছিয়ে পরেছে, তাল রাখতে পারছেনা।
শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছে। যেমন যাচ্ছে কৃষি পন্যের খাদ্য ও সবজীর সিংহভাগ। অন্য দিকে গ্রামের চাষি কৃষি পন্য থেকে প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না। বর্তশান বাজার মূল্য এর ক্ষেত্রে গ্রাম শহরের দ্রব্য বিনিময়ে মূল্য গ্রামের বিপক্ষে। দেশের বিত্তবানদের বড় অংশ থাকেন শহরে। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বেশি। তাই গ্রামের উৎপাদিত পন্যের অনেক খানি তাদের ভোগে চলে আসে। শহরে বিত্তবানদের কারণে জাতীয় সম্পদের এক বড় অংশ তাদের হাতে এসে পরে। এ ক্ষেত্রে দরকার সামগ্রিক পরিকল্পনায় গ্রাম সমাজের পুনগঠন এর জন্য সমতা তৈরী করা, বৈষম্য দূরকরণ। তেমনি দরকার গ্রাম-শহরের সম্পর্কের একটি ভারসাম্যের। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা হলো গ্রাম হবে শহর। অর্থাৎ শহর জীবনে যত রকম সুযোগ সুবিধা আছে তা বিদ্যমান হতে হবে গ্রামে। এই জন্য গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ণ এর জন্য এক বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে সরকার। যার মধ্যে অন্যথম হলো একটি বাড়ী একটি খামার। এই প্রকল্প এর আওতায় এ যাবত ৮২ হাজার ৩৯৫টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। সমিতির উপকার ভোগী পরিবার এর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৮১ হাজার এবং প্রত্যেক উপকারভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৪ লাখ।
এই প্রকল্প এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলে দারিদ্র এর হার ২২.৮% থেকে ১৮.৬% নামিয়ে আনা। ২০ সালের শেষে দারিদ্র এর হার ৮% এ নামিয়ে আনা। ২০২১ সালের মধ্যে বর্তমান দারিদ্রসীমার নীচে ১ কোটি পরিবারকে অন্তর্ভূক্ত করে দারিদ্রকে শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসা। মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে শিক্ষা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রেী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ এর একটি হলো শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার একটি অন্যথম অগ্রাধিকার প্রকল্প। সেই লক্ষে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ এর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক একটি মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক এর সাফল্যগাথা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ রেভ্যূনিউশন ইন বাংলাদেশ শিরোনামে পুস্তিকা তৈরী করেছে। আমাদের জাতীয় সংবিধান এর ১৫(খ) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গিকার রয়েছে। রুপকল্প ২০২১ কে কেন্দ্র করেই সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রনিত হয়েছে। তারমধ্যে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, দারিদ্রদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, আশ্রায়ন প্রকল্প-২, ভূমীহিন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান মির্মাণ। খাদ্য সহায়তা, সোসাল ডেভোলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল সার্ভিস, বিধিবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ্য মহিলাদের ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম, একটি বাড়ী একটি খামার, মাধ্যমিক বিদ্যালয় উপবৃত্তি, ভিজিডি, বয়স্কভাতা কার্যক্রম, প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা, ওএমএস ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এর জন্য এল.জি.ইডি, মাধ্যমে গ্রামের পাকা রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট, গ্রামের গ্রোথ সেন্টার, অবকাঠামো নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। পাবলিক হেলথ ডিপাটমেন্টের গৃহিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল প্রকল্প ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও শতভাগ স্যানিটেশন কার্যক্রম প্রকল্প। এ ক্ষেত্রে সরকারের গৃহিত পরিকল্পনা গ্রাম উন্নয়ন সম্পর্কে যা বললাম তার নূন্যতম মূল্য ও বাস্তবায়ন হবে না যদি না গ্রামের জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদ এর নেতৃত্ব সঠিকভাবে বাছাই করে নির্বাচিত করা নায় যায়।
উপরোক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার এর সম্মিলিত প্রকল্পের জন্য সততা ও সক্ষমতা থাকতে হবে। গ্রাম হবে শহর এ ক্ষেত্রে গ্রামীণ জীবনের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নের কর্মসূচী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা ভুল হবে। বিগত এক দশকে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিকশিত নীতির ফলে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের গ্রাম উন্নয়ণ সম্ভব।
লেখক : ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।