চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হলেন প্রফেসর মোহাম্মদ উল্যাহ স্বপন
শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১২
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত সংখ্যার পর), মানিক মিয়া এভিনিউ। বেছে বেছে ৩০টি মেয়ে নিয়ে সেই বিশাল রাস্তা ধরে হাতে ৩০টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল নিয়ে আমি সামনে কমান্ড করে চললাম। পরনে সাদা কামিজ, সাদা পায়জামা, মাথায় স্কার্ট। সাহারার হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। গাড়ি ঘোড়া, মানুষ চলাচলের ভিল থাকা সত্ত্বেও লোকে সম্ভ্রমে পথে ছেড়ে দিয়েছিল। সন্ধ্যার একটু আগেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে ঢুকে ছোট লনখানার ভিতর গুটি গুটি করে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
বঙ্গবন্ধু এলেন, পরনে সাদা পায়জামা, গায়ে পাঞ্জাবী, পায়ে বোধ হয় সাদা সেন্ডেল। শ্রদ্ধায় সম্ভ্রমে আমি এটেনসান কমান্ড করে, প্রেজেন্ট আর্ম এর কমান্ড করে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দিলাম। এই বোধ হয় জীবনে প্রথম আমি একজন সাধক খাটি বাঙ্গালিকে গার্ড অব অনার দিলাম। আমার দেশের মেয়েরা ও আমি তাকে, একজন দেশবরেন্য লোককে, সসম্মানে সম্মান জানালাম।
বঙ্গবন্ধুকে সেদিন দেখেছিলাম অগ্নি শিকার অগ্নি পুরুষ, হাতে তার জনগণের আকাঙ্খার লাল পতাকা, লাল সূর্য শিখা। কত যুগ যুগান্তর আগে আমি যেন এক সুপ্ত ঘুমের ঘরে আদেশ পেয়েছিলাম এই অগ্নি শিকার অগ্নি পুরুষকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য। আমি যেন তখন সেই জগতে ছিলাম না অন্যূ জগতে অবস্থান করছিলাম।
এত সাধারণ ভাবে তিনি এলেন, কোন বিউগল বা ব্যান্ড পার্টির বাজনা বা ড্রাম বাজেনি। কোন বিশাল মাঠে দামী চেয়ারে কোন জেনারেল, বিগ্রেডিয়ার, কর্নেল ও ক্যাপ্টেনের নাম আর লাগান নেই। বঙ্গবন্ধু আর আমরা। লক্ষ লক্ষ জনগণের আশা আকাঙ্খার, শ্রদ্ধার, ভালবাসার আমাদের বঙ্গবন্ধু।
আমি বেছে বেছে অনেকগুলো মেয়েকে রাইফেল ট্রেনিং দিয়েছিলাম। আমার নাওয়া, খাওয়া, বিশ্রাম ছিল না। প্রেজেন্ট আর্ম বলা মাত্রই রাইফেলগুলো টপাটপ শব্দ করে সামনে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্যালুড করল। আমি এগিয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্যালুড করে হাত বাড়িয়ে দিলাম গার্ড অব অনারের প্রথামত। বঙ্গবন্ধু আমাকে মুচকি হেসে সলাম জানাল। সেই সন্ধ্যায় টিভি রেডিওতে আমাকে ও মেয়েদের দেখাল বাংলার জনগণের বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দিয়েছে বাংলাদেশের ঢাকার মেয়েরা। বরাবর করাচি থেকে ভুট্টু, ইয়াহিয়া, বঙ্গবন্ধুর সাথে ৬ দফা আন্দোলন নিয়ে আলাপ আলোচনা চলল ইস্ট পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জনগণের কোন কথা বলেই ওদের সমঝোতায় আনতে পারেননি ২৫ শে মার্চ ভুট্টু ও ইয়াহিয়া খান প্লেনে করাচি রওয়ানা হওয়া মাত্রই পাকিস্তা সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লো ঢাকার বুকে।
(চলবে————)