শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১২
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত সংখ্যার পর), সমগ্র দেশ সুপ্ত ঘুমের ঘোর থেকে জেগে উঠল। জেগে উফল পথ হারা দিশে হারা, ঘর ছাড়া, বাড়ী ছাড়া, সাধারণ মানুষ। পেল পধের দিশা। দিন মজু, খেটে খাওয়া লোক বুঝল দাবীর অধিকার আদায় করে নেয়ার শপথ।
আমি একদিন ভীরু হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করলাম। বঙ্গবন্ধু বোধহয় সাজেদা চৌধুরীর কাছে আমার কথা শুনে থাকবেন। আবার বাবার পরিচয় দিলাম, সঙ্গে সঙ্গে হেসে ফেললেন তিনি, আপনি খান বাহাদুর নুরুজ্জামান সাহেবের মেয়ে ? আপনার ভাই মোমেন আমার সাথে রাজনীতি করতেন সে কথা বললেন, আরো বললেন শুনলাম আপনি একজন ক্যাপ্টেন, মেয়েদের একটু ট্রেনিং দিন। প্রায় একশত মেয়েকে ইন্দিরা রোডে, মরীচা হাউজে, সাজেদ চৌধুরীর বাড়ীতে প্রায় মাস খানেক ট্রেনিং দিয়েছিলেন থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে। এগুলো মেয়েদেরকে শুনিয়েছি অর্গানাইজ করছে সাহারা খাতুন, এখন সে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির জেনারেল সেক্রেটারী।
সাজেদা চৌধুরীর অনুপ্রেরণার কথা আমার মনে আছে। তিনি আমাকে ভুক ভালবাসতেন, আমিও তাকে ছোট বোনের মত স্নেহ করতাম। তখন রাস্তায় এত বড় বড় ট্রাকের প্রচলন ছিল না, এত গাড়িও ছিল না, এত রিক্সা, এত রকম যানবাহনের প্রচলন ছিল না। আমি রক্সা করেই নিজ খরচে ইন্দ্রিরা রোডে মরীচা হাউজে যাতায়াত করতাম।
বঙ্গবনধুর কথায় আনন্দে, উৎসাহে উদ্দীপনায় জীবনযুদ্ধের তরুণী হয়ে উঠেছিলাম। চোখে ছিল আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন, জীবন যুদ্ধে আমিও তখন ছিলাম একজন নবীন সৈনিক। সংসার, বাড়ী, ঘর ছেড়ে আত্মহুতি দিলাম নবীনতার স্বপ্নে। চারদিকে সাড়া পড়ে গেল চিটাগাং বন্দর নগরীতে শিপে করে পাকিস্তানি সোলজার নেমেছে। অতি সত্ত্বর ঢাকা মহানগর রণভূমিতে পরিণত হবে। অনেক লোক বিশ্বাস করে গ্রামে-গঞ্জে পাড়ি জমাল। আমার স্বামীও আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভোলায় পাড়ি জমাল। আমি বঙ্গবন্ধুর আদেশকে শ্রদ্ধা করে আমার কোলের মেয়েটিকে নিয়ে পরীবাগে থেকে গেলাম।
রোজ ৪টায় ইন্দ্রিরা রোডে যেতাম। ৫টা-৬টায় রাইফেল ট্রেনিং দিয়ে বাসায় ফিরতাম। এমনি করে মাসখানেক না আরও বেশি পরে আজ আমার তত মনে নেই ২৩শে মার্চ অর্ডার পেলাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীতে বঙ্গবন্ধুকে রাইফেল গিয়ে দার্ড অব অনার দিতে হবে বিকাল ৫ট ঘটিকায়।
(চলবে———-)