দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কর্তব্য
দুর্নীতি এমন একটি বিশ বৃক্ষ, যার শাখা প্রশাখা ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যার শাখা প্রশাখা রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটি প্রবাধ হলো- দুর্নীতিকে যত বেশি প্রশ্রয় দেয়া হবে ততই তার শাখা বিস্তৃত হবে। কাজেই রাষ্ট্র ও সমাজের দুর্নীতিকে যতই প্রশ্রয় দেয়া হবে ততই তা বাড়তে থাকবে। এ যাবত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপের পরিসংখ্যানে দেখে গেছে শতভাগ দুর্নীতি মুক্ত কোন দেশ পৃথিবীতে নাই বল্লেই চলে। প্রতিযোগিতামুলক বাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিত্ত বৈভব এর প্রতি আশক্তির কারণে সমাজের নিচ থেকে উচ্চ পর্যন্ত মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো অসৎ উপায়ে রাতারাতি বড় লোক হওয়া। সরকার পরিবর্তন হলেও দুর্নীতি বন্ধ হবে না। তবে দুর্নীতি কমতে পারে সরকারের প্রশাসনিক নজরদারী ও আইন সংস্থা নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমলেও আবার কয়েকটি সেক্টরে বেড়ছে।
বিশেষ করে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরৎ আনতে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, আমলা ও বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তি। ব্যাপক হারে দুর্নীতি রাতারাতি কমাতে হলে শুধুমাত্র দুর্নীতি কমিশন দিয়ে হবে না। কারণ তাদের জনবল নাই বল্লেই চলে। এক্ষেত্রে বাছাই করা সৎ ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সমন্বয়ে যদি টার্ক্সফোর্স গঠন করে সারাদেশে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা যায় তা হলে ভালো সুফল পাওয়া যাবে।
প্রথমত : দুর্নীতিবাজদের গোপন তালিকা তৈরী করে প্রাপ্ত তালিকার অপরাধীরা যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারে তার জন্য বিমান বন্দর সহ স্থলবন্দরসমূহে ছবি সহ তালিকা দিয়ে রাখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।
করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে লকডাউনে থাকা অসহায় কর্মহীন মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তা সহ রিলিফ সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছেন। রিলিফ সামগ্রী বিতরণ বন্টন করতে গিয়ে সামান্য সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর দুর্নীতির কারণে সরকারের রিলিফ কার্যক্রমের অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির কারণে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সরকার সব ধরনের ঔষধ, চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করা সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌছার আগেই পকেটস্থ হয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটে। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত না করে সংক্ষিপ্ত বিচারিত আদালতের ব্যবস্থা করে প্রচলিত আইনেকে সংশোধন করতে হবে। জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে এমপি থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ এর হিসাব এর হলফনামা প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। এমপি, চেয়ারম্যান হলেই বাড়ী, গাড়ীসহ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া যাই এই ধারনা সমাজ থেকে দূর করতে হবে। এমন ধারনা সৃষ্টি করতে হবে যে, রাজনীতি একটি সেবা প্রদানকারী মানষিক পেশা। এর বেশি কিছু না। রাজনীতির সহজ উপার্জন এর পথ মনে করে, এই ধারনা থেকে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমানে রাজনীতিমুখী হয়ে পড়েছে।
এই ধারনা ভাঙ্গতে হবে। দেশের মানুষের রাজনীতি সচেতন হওয়া ভালো। কিন্তু সংগঠন ও নেতৃত্বমুখী হওয়ার প্রতিযোগীতা একটি খারাপ উদাহরণ। আমরা যদি এই উদাহরণ তৈরী করতে পারি যে, রাজনীতির মাঝেই টাকা উপার্জনের সুযোগ নয়, বরং মেধা ও সসতা অর্জন এর মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব অর্জন ও মানুষের ভালোবাসা অর্জনই মূল উদ্দেশ্য, তাহলেই আমাদের সমাজ থেকে পংকিলতা-দুর্নীতি দূর করা সম্ভব।
লেখক : ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।