ভোলায় করোনা নমুনা সংগ্রহে ল্যাবের টেকনোলজিস্ট কারা ?
দেশের ভূ-খন্ডের বিচ্ছিন্ন একটি জেলা হচ্ছে দ্বীপজেলা ভোলা।ভোলায় মোট ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলায় প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা পেতে রয়েছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল। কয়েকটি মা ও শিশু চিকিৎসা কেন্দ্রসহ মোট ৩৫টি মেডিকেলে টেকনোলজিস্ট ল্যাব পোস্ট রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কর্তব্যরত রয়েছেন মাত্র ৬ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট তার মধ্যে ৩ জন বিএসসি শিক্ষারত অবস্থায়। আর ভোলা সদর ২৫০ বেড হাসপাতালে ল্যাবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১জন।
বর্তমানে দেশের করোনা সংকট মোকাবেলা জেলায় করোনার আইসোলেশন ইউনিট থাকলে সেখানে করোনা রোগীদের নমুনা সনাক্তকরণে নেই কোন ল্যাব ও নমুনা পরিক্ষা করার কোন প্রয়োজনীয় উপকরণ। জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে করোনা উপসর্গের নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার রিপোর্ট পেতে পাঠাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তছাড়া জেলায় করোনা নমুনা সংগ্রহ করতে নেই পর্যাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং মহামারী করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত ও মোকাবেলা করার জন্য যাহা যথেষ্ট নয়। যদিও সিএইচসিপি ও ইপিআই দের একদিনের ট্রেনিং নিয়ে করোনার মতো রোগের স্যাম্পল/ নমুনা কালেকশন করা যাহা ঝুকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। কারন তারা আদৌ কি তা ঠিক মত কালেকশন করতে পারছেন কিনা এনিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে জনমনে।
তথ্যসূত্র জানা যায় এ পর্যন্ত ভোলায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে মোট ১৯৮টি করোনা উপসর্গের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যারমধ্যে ১৪৩টি নমুনার রিপোর্ট নেগেটিভ আর বাকি রিপোর্ট এখন পর্যন্ত অপেক্ষামান রয়েছে। তাছাড়া অদক্ষ জনবল দিয়ে কিছু স্যাম্পল কালেকশন করায় অনেক নমুনা নষ্ট হয়েছে বলে তথ্যদি পাওয়া গেছে। ভোলায় এই পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে তিন জনের মৃত্যু হলেও তাদের নমুনা সংগ্রহের রিপোর্টে নেগেটিভ পাওয়ার দাবি করছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ।
অপরদিকে ভোলার করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ঘুরে দেখাযায় করোনা রোগীদের সাজানো বেড থাকলেও রোগির সেবাদানে দক্ষ বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স বা কোন ওয়ার্ডবয় নেই বল্লেই চলে। যদিও এখন পযন্ত কোন করোনা রোগী আপাতত নেই। অপরদিকে ২৫০শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে সাধারন রোগীদের পরিক্ষা-নিরিক্ষা করতে প্যাথলজি বিভাগে যেখানে ৮ জন টেকনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছে। এছাড়া এখন আবার নতুন জীবাণু ভাইরাস করোনা সংক্রামক টেষ্টের সূচনা হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা রোগীদের নমুনা বা স্যাম্পল কালেকশন করতে অনেকসময় হিমসিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত এই টেকনোলজিস্ট কে। তাই অনাতিবিলম্বে করোনা রোগিদের নমুনা সংগ্রহে দরকার প্রশিক্ষিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট জনবল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে এই জেলায়।
বর্তমান বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বার্তায় বার বার বলছে করোনা মোকাবেলায় ও আক্রান্ত রোগির সংখ্যা সনাক্তকরণে প্রতিটি দেশকে যেখানে বেশি বেশি টেস্ট করার পরামর্শ দিচ্ছে তারা সেখানে দেশের প্রতিটি জেলার সরকারি হাসপাতালে অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রাখা অত্যন্ত জরুরী বিষয় বলে মনে করছেন দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে লকডাউন এর ভোলায় গত ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এত সতর্কতা মধ্যেও ইতিমধ্যে প্রথমবার দুইজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার ফলে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা আতংক বিরাজমান। আর তাই সাধারণ মানুষের বলছে, এমন পরিস্থিতিতে জেলায় আরো বেশি বেশি করোনা নমুনা সংগ্রহ ও টেস্টের মাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন। আর যার জন্যে এখন দরকার হচ্ছে অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দক্ষ জনবলের।
তথ্যসুত্রে আরো জানা যায়, জেলার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি দিয়েছে সিএইচসিপিদের দিয়ে নাকি করোনা রোগির স্যাম্পল কালেকশন করানো হবে। আর তাদের দিয়ে করোনা স্যাম্পল কালেকশন করা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। কারন অনভিজ্ঞদের দিয়ে এসকল নমুনা সংগ্রহ করা হলে ফলস্বরুপ পজেটিভ নমুনার রিপোর্টের যায়গায় অনেকাংশেই নেগেটিভ রিপোর্টের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই তাদের দিয়ে করোনা রোগের মতো স্যাম্পল কালেকশন না করানোর পরামর্শ জেলার অধিকাংশ মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের।
এদিকে ভোলা জেলার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ এর পক্ষহতে বর্তমান করোনা ক্রাইসিস মুহুর্তে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ রতন কুমার ঢালির কাছে গত ৪/৪/২০ ইং তারিখে আবেদন করা হয়, অদ্যাবধি কোন সারা মেলেনি বলে জানায় সংগঠনের সদস্যরা। অথচ ভোলা সদর উপজেলায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পদ খালি আছে এখনো মনপুরা, তজুমুদ্দিন, খায়েরহাট, চরশষিভুষণসহ ভোলার প্রতিটি উপজেলায়। অথচ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের বিপরীতে উল্লেখি হাসপাতাল গুলোতে কোন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। আর বাকি হাসপাতাল গুলোতে পদের বিপরীতে লোক রয়েছে মাত্র ২৫% এর কম। যেখানে সদর হাসপাতালে পোস্ট রয়েছে ৮ টি, কিন্তু দায়িত্বরত মাত্র একজন। আর এই যদি হয় অবস্থা তাহলে ভোলায় করোনা রোগীর প্রকৃত রুপ রোগির সংখ্যা কিভাবে উঠে আসবে বলে প্রশ্ন তাদের।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অজানা কারনে গত ১২ বছর যাবত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ নেই। যারা রোগ নির্ণয় ও নমুনা সংগ্রহ করে,কিন্তু জাতির এই ক্রান্তি লগ্মে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা অভিমান না করে থেকে নিজের জীবনকে সংকায় ফেলে হলেও কাজ করতে আগ্রহী। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের কাজে না লাগিয়ে ওয়ার্ড বয়, সিএইচসিপি,এবং ইপিআইর লোক জনবল দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। আর যার ফলাফল ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে পারে। যদি সঠিকভাবে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা না হয়, তাহলে করোনা আক্রান্তের রোগী সঠিক রিপোর্ট কখনোই পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় অধিকাংশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন ড.রতন কুমার ঢালী জানান, মেডিকেলে টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন তা স্বীকার করেন তিনি। যদিও নিয়োগ দিচ্ছেনা সরকার। আর যদি কোন সংগঠন বা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে তাদের পারিশ্রমিক বিহীন কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলেও এসময় জানান তিনি।