সর্বশেষঃ

শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর), তিনিও জাতীয় পার্টির নাম দিয়ে রাজনীতিতে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন। গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-পল্লীতে, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা স্থাপন করেছেন। বিশেষতঃ জেলায় মহকুমায় রাস্তাঘাট অনেক উন্নতি লাভ করেছে। পথহারাদের জন্য তার হৃদয় ব্যকুলিত হত। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য পথের ইট-পাথর ভাঙ্গার কাজ করে হাতগুলি ক্ষত-বিক্ষত করেছে। এরশাদ সাহেব তাদের ঘুরে ঘুরে দেখেছেন, ক্ষত-বিক্ষত হাতগুলি ধরে ধরে দেখেছেন, কত মায়া মমতা স্নেহের কি আর্তি ছিল, সে যে না দেখেছে সে তো বিশ্বাস করবে না। তিনিও একজন মেজর জেনারেল ছিল। সৈনিক পোষাকে সে চলাফেরা করত। কঠিন দৃঢ়তার ছাপ ছিল তাল চোখেমুখে। শেষ পর্যন্ত তাকেও তার প্রেসিডেন্টের গদি থেকে জনগণের আন্দোলনে সরে দাঁড়াতে হল।

প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া নানারকম ফন্দিফিকির এটে তাকে শ্রীঘরে পাঠালেন। যে সকল দোষত্রুটি তিনি দেখিয়েছেন তা না দেখালেও চলত। এরশাদ সাহেবকে গদি থেকে নামিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজত্ব হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু সে রাজত্ব চালাতে তিনি সফলতা অর্জন করতে পারেন নি। জনাব এরশাদ মিষ্টার জিয়া ও মিসেস খালেদা জিয়ার মত ক্ষমতালোভী ছিলেন না। পুরোদমে দু’তিনটি বছর আন্দোলন চালিয়ে তাকে তার গদি থেকে নামাতে বাংলার কত দামাল ছেলে-মেয়েকে আত্মহুতি ও রক্ত দিতে হয়েছে তা লিখে আর শেষ করা যায় না।

পাঁচ-ছয়-সাতদিন হরতাল থেকেছে। বাংলার জনগণ তা হাঁসিমুখে মেনে নিয়েছে। ঢাকার বাজার হট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, হকার্স মার্কেট, গুলিস্থান, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, মহাখালী, ফার্মগেটে হরতাল হয়েছে, শুধু ঢাকায় নয় সারা বাংলাদেশে এই রকম হরতাল চলেছে। শেষ পর্যন্ত কোর্ট, কাচারী, অফিস, আদালত, ব্যাংক, পোষ্ট অফিস সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রেল লাইন পর্যন্ত বাংলার জনগণ তুলে ফেলেছিল।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারী মার্চ মাসে কোন সরকার ছিল না। জনগণই সরকারের কাজ পরিচালনা করেছে। অসহযোগ আন্দোলন চলল দুর্দান্ত গতিতে। সপ্তাহে, সপ্তাহে আন্দোলন বেড়েই চলছিল এত বড় আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর সময়ও হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলছিল দুর্দান্ত আন্দোলন। ১৯৯৬ সালে ২৮ জানুয়ারী, তখন রোজা চলছিল। অকম্মাৎ জগন্নাথ হলে বিনা উস্কানিতে নিরীহ ছাত্রদের উপর হামলা চালায় পুলিশ। ছাত্ররা দিশেহারা হয়ে পড়ল। দুপুর ১২টার সময় ছেলেরা তখন খেতে বসেছিল, হঠাৎ জগন্নাথ হলের গেট ভেঙ্গে বি.ডি.আর, পুলিশ তাদের ডাইনিং রুমে ঢুকে তাদের মুখে গ্রাস কেড়ে নিল ও বলল মালাউনের বাচ্চারা রোজার দিনে রোজা রাখিস না? ভাত খাচ্চিস ? আজ তোদের শেষ করব। এই বলে মারধোর করে দুই শত ছেলেকে বেঁধে থানায় নিয়ে গেল। তারপর ছেলে ও মেয়ের দল ক্ষিপ্ত হয়ে বাংলার আনাচে-কানাচে হরতাল অসহযোগের খুঁটি গেড়ে বসল।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।