সর্বশেষঃ

আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঐতিহাসিক দিন

‘আমি চৌধুরী জাফর উল্লাহ বলছি, মালয়েশিয়ার কিলাত কেলাব মাঠ থেকে। জয়ের জন্য আর দরকার এক বলে এক রান।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের কাছে সেই এক বলে এক রানের স্মৃতিটা যেন কখনও ভুলবার নয়। হাসিবুল হোসেন শান্তর প্যাডে লেগে আসা লেগবাই সূচকে একরানই বাংলাদেশকে বিশ্বক্রিকেটের সম্মান এনে দিয়েছিলো।

মনে হয় যেন সে দিনের ঘটনা। এখনও যেন কানে ভাসে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শরাফতের সেই ধারাভাষ্যটি। কিন্তু দেখতে দেখতে কেটে গেল ২৩টি বছর। ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামপুরের কিলাত কেলাব মাঠে কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসির সহযোগীদের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৭ সালের আজকের দিনে কুয়ালামপুরে টাইগারদের প্রথম বিজয় কেতন উড়েছিল । কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ড, সেমির যুদ্ধে স্কটল্যান্ড আর ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

১৯৯৭ সালের আজকের দিনে (১৩ এপ্রিল) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামপুরের কিলাত কেলাব (মালয়েশিয়ার ক্লাবকে কেলাব বলে) মাঠে মরিস ওদুম্বে, স্টিভ টিকোলো, টমাস ওদেয়ো, টনি সুজি, আসিফ করিমদের কেনিয়াকে দুই উইকেটে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জিতেছিল আকরাম-বুলবুল-নান্নুদের বাংলাদেশ। এক বলে এক রান দরকার থাকা অবস্থায় মিডিয়াম পেসার হাসিবুল হোসেন শান্তর প্যাডে লেগে আসা লেগ বাই থেকে জয় সূচক রান পায় বাংলাদেশ।

রেডিওতে সেই অবিস্মরণীয় জয়ের মুহূর্তটি মুহূর্তের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয় সারা বাংলাদেশে। টেকনাই থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া- সারা বাংলাদেশ মেতে ওঠে অবিস্মরণীয় জয়ে খুশিতে। স্বপ্নের বিশ্বকাপ, বাস্তব হয়ে দেখা দেয়। আইসিসি ট্রফি হাতে আকরাম খানের হাসি মুখ হয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন। আকরাম, বুলবুল, নান্নু, দুর্জয়, সুজন, পাইলট, রফিক, শান্ত, সাইফুল, মনি, আতাহাররা বনে যান জাতীয় বীর। আজকের বাংলাদেশের ক্রিকেট যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার মজবুদ ভীত ও রূপকার ওই সব ক্রিকেটবীররা।

কেউ কেউ একটা ভুল হিসেব কষে থাকেন। কারো কারো ধারণা ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিলই বুঝি প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশের। আসলে তা নয়, সেবার আইসিসি ট্রফির তিন শীর্ষ দল পেয়েছিল বিশ্বকাপ খেলার টিকিট। আইসিসি ট্রফি শুরুর কয়েক মাস আগেই বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল ১৯৯৭ এর আইসিসি ট্রফির চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপ ও তৃতীয় হওয়া দল খেলবে ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপ। সেই আলোকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেমির যুদ্ধে জেতার পরপরই আসলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সেটা ছিল ১৯৯৭ সালের ৯ এপ্রিল।

বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র মিললেও ২৩ বছর আগে আজকের দিনে বাংলাদেশ হয়েছিল আইসিসি ট্রফির চ্যাম্পিয়ন। সেই ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪- টানা পাঁচ বার ওই আইসিসি ট্রফিতে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিবার ফিরে এসেছে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে। অবশেষে ১৯৯৭ সালে দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন হয় পূর্ণ।

যে কেনিয়ানদের কাছে ৯৪ সালে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হয়েছিল টাইগাররা, কাকতালীয় ভাবে সেই দলকে হারিয়েই অবশেষে আইসিসি ট্রফির সেরা দলের খাতায় নাম লেখায় আকরাম বাহিনী।

সেদিনের মালয়েশিয়ার আইসিসি ট্রফি জয়ের ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অমলিন সেদিনের স্মৃতি। অনেকেই সেই ঐতিহাসিক দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আকরাম-বুলবুল-নান্নুদের হাত ধরে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেয় লাল-সবুজের পতাকা। বিজয়ের সেই মুহূর্তগুলো যেন এখনো অমলিন। এখনো রঙিন।

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম লেখানোয় সেই সব জাতীয় বীরদের দেয়া হয় বড় ধরনের সংবর্ধনা। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সব বীরদের ৫ কাঠা জমি ও একটি করে গাড়ী উপহার দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সারা ঢাকা শহর সেই জয়ের ট্রফি নিয়ে বিজয়ী দল প্রদক্ষিণ করেছিলো যা আজও অনেকের স্মৃতি হয়ে আছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।