হিন্দু প্রতিবেশীর শেষযাত্রায় লাশ কাঁধে মুসলিম পড়শিরা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর লকডাউনের মধ্যেই সম্প্রীতির নজির গড়েছে একদল মুসলমান যুবক। তারা হিন্দু এক বৃদ্ধের শেষ যাত্রায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন। এমনকি ১৫ কিলোমিটার হেটে শ্মশান পর্যন্ত সেই লাশ পৌঁছেও দিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মালদার কালিয়াচক এলাকায়। সেখানেই মানবতার ওপর কোনো ধর্ম নয়, এই বার্তা দিয়েই সম্পন্ন হয় মৃত নবতিপর বৃদ্ধ বিনয় সাহার শেষকৃত্য।
আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত ওই গ্রামে একমাত্র হিন্দু, সাহা পরিবার। গত ২০ বছর ধরে থাকছেন লওয়াইতলার গ্রামে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ থাকলেও, প্রতিবেশিদের সঙ্গে সেই পরিবারের ছিলো দারুন সম্পর্ক। হঠাৎ করেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগে মৃত্যু হয় বিনয় সাহা নামে সেই পরিবারের এক বৃদ্ধের।
এদিকে গণপরিবহণ বন্ধ আসতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনরা। অন্যদিকে লকডাউন এবং সংক্রমণের আতঙ্ক। এর মধ্যে মারা যাওয়া বৃদ্ধের সৎকার কীভাবে হবে? এই নিয়ে পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।
লাশবাহী খাটের ওপরে সারা দিন পড়ে থাকে সেই লাশ। এরপর দিন শেষে রাতে আশে। ধীরে ধীরে জমায়েত শুরু করেন প্রতিবেশিরা। একটা সময় গোটা গ্রাম তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। এমনকি মৃত সেই বৃদ্ধের ছেলেদের কয়েকজন মুসলিম বন্ধু নিজ কাঁধে খাটিয়া তুলে শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছে দেয় লাশ।
এ ব্যাপারে সেই গ্রামের সাদ্দাম শেখ নামে একজন জানান, এই কাজটা তারা করেছে শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরে।
তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম বিনয় সাহার মৃত্যুর খবর পাই। তাই প্রতিবেশি হিসেবে নিজেদের কর্তব্য করতে এগিয়ে আসি। মানবতার ওপরে কোনো ধর্ম নেই। সেটাই আমরা বলতে চেয়েছি।
এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাজিয়া বিবি। তিনি বলেছেন, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পৃথক হলেও, আমরা একসঙ্গেই আছি।
অন্যদিকে এমন দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য কালিয়াচক-২ ব্লকের লওয়াইতলা গ্রামের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মৃতের দুই ছেলে কমল ও শ্যামল সাহা।
তারা বলেন, বাবার শেষকৃত্য নিয়ে আমরা বেশ উদ্বেগে পড়েগিয়েছিলাম। লকডাউনের কারণে কোনও আত্মীয় আসতে পারছিলেন না। এদিকে কি করবো ভাবতে গিয়ে সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছিলো। তখনই প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসেন। আর রীতি মেনেই বাবার শেষকৃত্য করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল।