শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : বাংলার আনাচে কানাচে, পথে প্রান্তরে, অলিতে গলিতে শেখ মুজিবের আবির্ভাব হলো। গ্রামে, গঞ্জে, নগরে, মহানগরে তার সন্ধান মিলতো। নিজের জীভনের সুখ স্বচ্ছন্দ বলে তার কিছু ছিল না। নিজের স্ত্রী পুত্রের সাথে দু-দন্ড বিশ্রাম বা সংসারের আলাপ তার ছিল না। নিজের বড় মেয়ে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের দিন তিনি জেলে ছিলেন। তার বন্ধু-বান্ধবরা তার মেয়ের বিয়ে পড়িয়েছিল। বাংলার মনি, বাংলার মার্যাদা তার জীবনের সম্বল ছিল।

ছয় দফার দাবীতে জনগণের আন্দোলন, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে লাখো লাখে লোকের সমাবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। যার যা আছে, তাই নিয়ে শত্রুর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ো এদেশকে মুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি কর।”

২৫ শে মার্চ ১৯৭১ অতর্কিত রাতের গভীরে ওয়েষ্ট পাকিস্তানীর ঢাকার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কত লোক যে মারা গেল তার কোন হদিস নেই। হানাদার বাহিনী আক্রমন চালিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে করাচী নিয়ে গেল। রাতের গভীরে অসহায় নারীর ক্রন্দন ঢাকার বুকে এক বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিল। দলে দলে মানুষ গ্রামাঞ্চলে পাড়ি জমাল। দলে দলে নওযোয়ানরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিল। পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচালো। কত স্বামী স্ত্রী-পুত্র সহ ছদ্মবেশে ভারতে পালিয়ে গিয়ে স্বাস্তির নি:শ্বাস ফেলল।

এমনি করে হাজার হাজার, লাখো লাখে ছেলে ভারতে এসে মুক্তিবাহিনী গঠন করে নিজের দেশের জন্য যুদ্ধ করার দাবী জানাল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন এবং তাদের ট্রেনিং প্রাপ্ত করার জন্য আদেশ দিলেন। তাদের খাওয়া দাওয়া, থাকা, ঔষধপত্রের ভার গ্রহণ করলেন।

৯ মাসের ভীষন ত্যাগ, তিতীক্ষা, সংযম সংগ্রাম এক লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার আত্মহুতির মাধ্যমে আর ভারতের সাহায্যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ১ লক্ষ সোলজার থাকা সত্ত্বেও বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাদের পরাজয় বরণ করতে হল। সেদিন ছাত্র নেতৃত্বে ছিলেন ভোলার কৃতি সন্তান বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর ও রাজনৈতিক সচিব জননেতা তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হল।

(চলবে————–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।