মা ইলিশ রক্ষা অভিযান ॥ ভোলায় ২২ দিনে ৩শ’ ২৬ জেলের জেল-জরিমানা
সুদের হার হবে সিঙ্গেল ডিজিটে
ঋণ ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, একমাত্র ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে এর চেয়ে কম সুদও নির্ধারণ করতে পারবে।
তবে কোনোক্রমেই ৯ শতাংশের বেশি সুদ নেয়া যাবে না। এ ঘোষণা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এর আগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে পরিবর্তন করা হয় সেই সিদ্ধান্ত। অবশ্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকেই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংক মালিকদের গড়িমসির কারণে এতদিনেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বস্তুত ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতেই সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংক মালিকরা। এ জন্য অবশ্য তারা সরকারের কাছ থেকে বেশ কয়েক দফা সুবিধা আদায় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু নানা সুবিধা নিয়েও কথা রাখেননি ব্যাংক মালিকরা।
সিদ্ধান্তটির বাস্তবায়ন এড়াতে নানা কৌশল ও শুভংকরের ফাঁকির আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। এরপর বিএবি ও এবিবির সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্যাংক আমানতে ৬ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন শুরুর কথা জানান অর্থমন্ত্রী। এ প্রেক্ষাপটে জারি করা হল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন। আমরা মনে করি, এরপর আর ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে গড়িমসি করার সুযোগ নেই।
ঋণের উচ্চ সুদহার দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। গ্যাস সংকট, বিদ্যুতের ঘাটতি এবং ডলারের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে ব্যবসা পরিচালনা করা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে সন্দেহ নেই।
বিনিয়োগ বাড়লে এবং নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠলে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। অর্থাৎ এর সঙ্গে সামগ্রিক অর্থনীতির প্রশ্ন জড়িত। তাই ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা জরুরি।
সুদহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ খেলাপি ঋণ ও অনিয়ম। যথাযথ নিয়ম না মেনে ঋণ দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলোকে সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো গ্রাহক নতুন নীতিমালার আওতায় ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে তিনি আর এই সুবিধা (সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার) পুরোপুরি পাবেন না। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে যে সময়ের জন্য গ্রাহক খেলাপি হবেন, ওই সময়ের জন্য খেলাপি কিস্তির ওপর এবং চলতি মূলধন ঋণ হলে বকেয়া স্থিতির ওপর অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে দণ্ডসুদ দিতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহক খেলাপি হলে ঋণের সুদ দাঁড়াবে ১১ শতাংশে।
এর ফলে খেলাপি ঋণ নিরুৎসাহিত হবে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোয় অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা গেলেও খেলাপি ঋণ কমে আসবে। এর ফলে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে বজায় রাখা সহজ হবে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ জায়গাটিতে দৃষ্টি দেয়া।