সাংবাদিক সাগর চৌধুরীকে নির্যাতনকারী সেই নাবিল গ্রেফতার
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সাংবাদিক সাগর চৌধুরীকে নির্যাতন ও এই নির্যাতনের ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দারের ছেলে নাবিল হায়দারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে তার বিরুদ্ধে বোরহানউদ্দিন থানায় মামলা হয়। সাংবাদিকের ওপর এমন বর্বর হামলার ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেছে সচেতন মহল।
আজ বুধবার (১ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে বোরহানউদ্দিনের উপজেলা সড়ক এলাকার বাসা থেকে নাবিলকে গ্রেফতার করা হয়। লালমোহন সার্কেলের এডিশনাল পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে।
নাবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি এসএম হলের আবাসিক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
এদিকে বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক জানান, সাগর চৌধুরী বাদী হয়ে তাকে নির্যাতনের ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় নাবিল হায়দারকে এক নম্বর এবং অজ্ঞাত পাঁচ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
উল্লেখ্য, বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে জেলেদের জন্য আসা চাল চুরির অভিযোগ করায় সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে নাবিল হায়দারের বিরুদ্ধে। ক্ষোভ মেটাতে ওই সাংবাদিককে মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী অপবাদ দিয়ে পেটানো হয়। পরে নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর ওই সাংবাদিকের বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে উপজেলা সদরের রাজমনি সিনেমা হলের সামনে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মঙ্গলবার বিকাল থেকে বারবার ফোন করেও নাবিল ও তার বাবার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাবিলের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিক নির্যাতন খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এজন্য তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তিনি আরও বলেন, ‘নাবিলের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে যেটা করেছে সেটা ছাত্রলীগের নীতিবিরোধী, গঠনতন্ত্রবিরোধী। আমাদের দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছে সে। আমরা চাই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর বিরুদ্ধে যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, এই নাবিল তাকে হুমকি দিয়েছিল।
বোরহানউদ্দিন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি খুব বিব্রতকর। মঙ্গলবার সাগর থানায় বসে আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি তাকে পরামর্শ দেই বিষয়টি সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল ও নাবিলের বাবা জসিম উদ্দিন হায়দারকে জানানোর জন্য। এ ঘটনার তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এদিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী জানান, ‘বড় মানিকা ইউনিয়নে জেলেদের চাল কম দেওয়া হচ্ছে, এরকম অভিযোগে জেলেদের বক্তব্যসহ একটি ভিডিও সোমবার সাগর আমাকে দেখায়। আমি তখনই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিবকে ফোন করে জানতে চাই। এঘটনায় সাংবাদিককে মারধর, নির্যাতন এটা ঠিক নয়, অন্যায়। এর বিচার প্রত্যাশা করি।
ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক শওকাত হোসেন, দৈনিক ভোলার বাণী’র সম্পাদক মুহা: মাকসুদুর রহমান এবং বাংলাদেশ অনলাইন এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ ভোলার সাংবাদিকরা এ ঘটনার নিন্দা জানান এবং এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।
সুত্র : https://www.banglatribune.com/country/news/616491