থানকুনি পাতায় ভোলাবাসীর রাতের ঘুম হারাম
বাংলাদেশে ১৪ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে এমন খবরে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় বিষয়টি চর্চিত হচ্ছে। এদিকে করোনায় আক্রান্ত ইতালি, জার্মান, বাহারাইন, সৌদি আরব থেকে দলে দলে প্রবাসীরা আসায় এই আতঙ্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এদিকে আতঙ্কিত জনতার অনেকেই নানা সময় নানা গুজবে কান দিচ্ছেন। করোনা থেকে মুক্তি মিলবে এমন তথ্য পেলেই তা যাচাই-বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
এমনই এক গুজবে উৎকন্ঠায় ভোলাবাসী। একজন প্রসিদ্ধ পীর সাহেব স্বপ্ন দেখেছেন এমন গুজবের ওপর ভিত্তি করে তথ্য রটে, থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস আর সংক্রমিত হবে না, মিলবে মুক্তি। সেই গুজবে সাড়া দিয়ে ভোলা জেলার সকল উপজেলায় সাধারণ মানুষ রাতের আঁধারে থানকুনি পাতা সংগ্রহে নেমেছেন। ধানকুনি পাতা সংগ্রহে রাতের ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা। রাত না পোহােেত এই পাতা খেতে হবে এমন গুজবে অনেকে ইতিমধ্যে চিবিয়ে খেয়েছেন সে পাতা। তারা বলছেন, পীরকে স্বপ্নে বলে দেয়া এই থানকুনি পাতাই করোনাভাইরাসের উত্তম প্রতিষেধক।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে শুরু হয়েছে এ গুজব। অনেকে ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। কেউ কেউ থানকুনি পাতা সংগ্রহ করতে পেরেছেন জানিয়ে ছবিও পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ স্বজন, বন্ধুদের ফোন করে ঘুম ভাঙাচ্ছেন এবং জরুরিভিত্তিতে থানকুনি পাতা সংগ্রহের তাগিদ দিচ্ছেন।
ভোলা সদর উপজেলার এক বাসিন্দা জানান, জৈনপুরী পীর সাহেব স্বপ্নে দেখেছেন যে, তিনটি থানকুনি পাতার আর এক গ্লাস পানি খেলে করোনাভাইরাস ছুঁতেও পারবে না। আর এই রাতের মধ্যেই পাতা তিনটি খেতে হবে। তিনি বলেন, এমন খবর শুনে আমিও রাতের বেলা উঠে থানকুনি পাতা খেয়েছি।
অপর এক বাসিন্দা বলেন, আমি তখনও ঘুমে। এমন খবর শুনে আমার বাবা ফজরের আগে আমাকে জাগিয়ে আমার মুখে থানকুনি পাতা গুজে দিয়েছেন। তখন আমি বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি জন্য থানকুনি পাতা খেতে হবে ? তখন বাবা উত্তরে বললেন, থানকুনি পাতা খেলে নাকি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই তোকে খাইতে দিছি। এক পীর নাকি এটা স্বপ্নে দেখেছেন এমন খবর শুনা গেছে। সত্য মিথ্যা কতটুকু জানি না।
ফেসবুকে অবশ্য এই গুজব কানে তোলেননি স্থানীয়দের কেউ কেউ। তারা গুজবে কান না দিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তারা বলছেন, এমন গুজবের উৎপত্তি কোথা থেকে তা কেউ জানে না। কোনো পীর স্বপ্নও দেখেছেন বলে শোনেননি তারা। শুধু ভোলা জেলা নয়, এর আশপাশের জেলাগুলোতে এমন গুজবের খবর শোনা গেছে। তারা রাতের আধারে ধানকুনি পাতা সংগ্রহে নেমেছেন। এটা সত্যি ? নাকি গুজব ? এ প্রশ্ন এখন সবার মনে।
এদিকে থানকুনি পাতার গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ভোলা জৈনপুরী খানকার খাদেম মোঃ জাহিদুল হক শুভ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আপনারা যেনেছেন যে, কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) রোগটি সারা বিশ্বে আতংকের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে, এবং এই রোগে বহু লোক মৃত্যু বরন করেছে। বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলাতে চলছে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব।
লোকমুখে ছড়িয়ে পরেছে যে, জৈনপুরী পীর সাহেব স্বপ্নে দেখেছেন “তিনটি থানকুনি পাতা আর এক গ্লাস পানি খেলে করোনাভাইরাস ছুঁতেও পারবে না”, আর এই রাতের মধ্যেই পাতা তিনটি খেতে হবে। এগুলো হচ্ছে এক প্রকার গুজব,
আপনারা কেউ এই গুজবে কান দিবেন না।
কিছু ইসলাম বিদ্বেষী কুচক্রী মহল ইসলামের ভাব মুর্তি এবং আমাদের ঈমান নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, জৈনপুরী পীর ছাহেব হুজুর এই ধরনের কোনো কথা বলেননি, তাই সকলে সতর্ক থাকুন, গুজবে কান না দিয়ে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক, আমিন।
দেশে আরও চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ চারজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। এদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশ প্রথম একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা একথা জানান। ফ্লোরা বলেন, ‘যিনি মারা গেছেন তার বয়স ৭০ এর বেশি। তিনি ফুসফুস, কিডনি, হৃদপিন্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন।’
উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৭৯৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ১৬৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস শুধু চীনেই মারা গেছেন ৩২২৬ জন। এর পর সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪৫ জন, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩৫০০ জনেরও বেশি। এরপরেই রয়েছে ইসলামিক দেশ ইরান। দেশটিতে একদিনে মারা গেছেন ১৩৫ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮৮ জন।
ইতালির পর স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্সের অবস্থাও খুব করুণ। স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯১ জনের মৃত্যুসহ মোট মৃত্যু ৫৩৩ জনের। এছাড়া জার্মানিতে ২৬ জন, ফ্রান্সে ১৭৫ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ১০৩ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যু ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।