সাংবাদিক আরিফের জামিন কীভাবে হলো জানে না পরিবার

মধ্যরাতে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দেওয়া মামলায় বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জামিনে মুক্ত হলেও কারা জামিনের উদ্যোগ নিলো তা নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশার উত্তর মিলছে না। শনিবার (১৪ মার্চ) সকাল থেকে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও নানা সমালোচনার মুখে রবিবার (১৫ মার্চ) কর্মদিবসের শুরুতেই খবর আসে জামিন হয়েছে আরিফুলের। রবিবার তাকে জামিন দেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা।

তবে কার আবেদনের ভিত্তিতে এবং কার নিয়োগকৃত আইনজীবীদের শুনানিতে আরিফুল ইসলামের জামিন হলো কেউ বলতে পারছেন না। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা জামিনের আবেদন করেননি। তারা কোনও আইনজীবীও নিয়োগ দেননি।

স্থানীয় সংবাদকর্মী ও সূত্রগুলো বলছে, মোবাইল কোর্টের সাজা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হওয়ায় চাপের মুখে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজের লোকজন দিয়ে আরিফের পরিবারের সঙ্গে কথা না বলেই কৌশলে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে জামিনের ব্যবস্থা করেন।

আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শুনি তার জামিন হয়ে গেছে। সেখান থেকে কারাগারে গিয়ে শুনি জামিন নিয়ে সে নাকি বেরও হয়ে গেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এখনও জানি না কীভাবে কী হলো? পরে আরিফুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার (১৪ মার্চ) রাতে কারা কর্তৃপক্ষ ওকালতনামায় তার সই নিতে যায়। তারা জানায় পরিবারের সদস্যরা এই ওকালতনামা নিয়ে এসেছেন। এ কারণে আরিফুল সই করেন দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন ও আহসান হাবিব নিলুর উপস্থিতিতে শুনানি করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা জামিন মঞ্জুর করেন। আহসান হাবিব নিলু প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি। কারা এই শুনানিতে আইনজীবী হিসেবে তাদের নিয়োগ দিলো—এমন প্রশ্নে আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি জানান, আহসান হাবিব নিলুর ডাকে তিনি শুনানিতে গিয়েছিলেন। তবে এই দুজনই পরবর্তীতে আর কথা বলতে রাজি হননি।
পরিবার জানে না অথচ কার আবেদনের ভিত্তিতে আরিফুলের জামিন হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কে আবেদন করেছে সেটা আমার জানার বিষয় না। ওকালতনামায় ভিকটিমের সই ছিল। দুপক্ষের শুনানি করে বিবেচনা অনুযায়ী জামিন দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এ সময় তার বিরুদ্ধে আধাবোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। অথচ আরিফ অধূমপায়ী।

আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) কারাদণ্ড প্রদানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রবিবার (১৫ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।