আমার মা
ড. তাইবুন নাহার রশীদ
মা নাই গৃহে
সংসার অরন্য তার
দেখিলে মায়ের মুখ
মুছে যাবে সব দুঃখ।
পৃথিবীতে সকল মা তার সন্তানদের জন্য একজন নিঃস্বার্থ সেবিকা যার তুলনা সে নিজে। আমার মা বারো ভুঁইয়া ঈসা খাঁর বংশধর ছিলেন। আমার নানা হামিদুল্লাহ ভুঁইয়া তখন দৌলতখান কোর্টে ওকালতি করতেন। আমার মায়ের নানা ও দৌলতখান কোর্টে ওকালতি করতেন। তাদের বংশের পুঁথি ছিল। দৌলতখান তখন একটি মহকুমা ছিল। ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে (বাং- ১২৮৩) ৩১ শে অক্টোবর বাংলা ১৬ই কার্তিকের মহা প্রলয়ংকরী বন্যার কথা আর শোনা যায় নি। এই মহাঝড়ে দৌলতখান নামক স্থান এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম একেবারে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল। বাবু উমাচরণ টট্ট্রোপাথ্যায় এই দৌলতখান মহকুমার এসডিও ছিলেন। বার্টন সাহেব ছিলেন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট।
আমার মায়ের দাদা চর নিশিন্দপুরের বিখ্যাত জমিদার ছিলেন। আমার নানাকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে ঘোড়া কিনে দিতেন। ঘোড়ায় চড়ার পারদর্শিতা লাভ করার জন্য। আমার নানা কিছুই করতেন না। কোর্টে যেতেন, ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন। বড় বড় বেড়িবাঁধের ন্যায় উঁচু পাড়ওয়ালা ৩টি দীঘি ছিল। শান বাধানো ঘাট, বিরাট তাল গাছ ছিল। বড়শি ফেলে মাছ ধরতেন। আমার নানা গ্রামের চেয়ারম্যান ছিল।
সন্ধ্যাবেলায় বাড়ীর দরজায় মজলিসে বসতেন। নানা রকম ময়না, টিয়া, এসব পালনের হবি ছিল। মেঘনা নদী তাদের সব গ্রাস করে সর্বহারা করে দিয়েছে। একই সাথে আমার পৈত্রিক পরিচয় না দিলেই নয়। আমার দাদা মৌলভী আলী আহম্মদ তৎকালীন ভোলা মহকুমায় দৌলতখান থানায় বিজয়পুর গ্রামের জমিদার। বাড়ীতে প্রকান্ড শান বাধানো ঢেউ খেলানো দীঘি। চারদিকে ঢেউ খেলানো উচু দীঘি। বাড়ীর সামনে বাধানো গেইট। ওনারা বলতেন সিংহ দরজা। জীর্ণ-শীর্ণ একতালা বিরাট বিল্ডিংটার ইটগুলো খুলে খুলে গিয়ে কালের জমিদারীর নিদর্শন হয়ে দাড়িয়েছেল। বাড়ীর সামনে বিরাট মসজিদ, পাকা প্রাইমারী স্কুল ছিল। মাস্টার ও মৌলভীগণের বেতন আমার বড় কাকা (চাচা) বহন করতেন। আমার বড় কাকা খুব রাশভারী লোক ছিলেন। তার সামনে কোন অন্যায় করলে খুব রাগ করতেন। এই ছিল আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার মা এরূপ আভিজাত্য পরিবারের ময়ে হওয়া সত্ত্বেও কোন হিংসা বিদ্বেষ তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় নি। মা ভীষণ দয়াবতী ছিলেন। কোন সময় খেতে বসলে একজন ভূখা গরীব এলই মা না খেয়ে পাতের ভাতগুলো তাকে দিয়ে দিতেন।
(চলবে——————)