লাল বেনারসি, গয়না সবই আছে নেই শুধু প্রাণপাখি
রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ নয়জনের মধ্যে আটজনের মরদেহ পাওয়া গেছে আগেই। পাওয়া যাচ্ছিল না কেবল নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমাকে। নৌকাডুবির প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর ভেসে উঠলেন পূর্ণিমা। গা ভর্তি গয়না, পরণে লাল বেনারসি সবই ঠিক আছে, শুধু প্রাণটাই নেই।
সোমবার (০৯ মার্চ) সকাল ৬টার দিকে নগরীর কাটাখালী থানার শাহাপুর এলাকা থেকে পূর্ণিমার মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা।
শনিবার ডুবে যাওয়া একটি নৌকা পাওয়া যায়। রোববার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পাওয়া গেছে অন্য নৌকাটিও। তবে নৌকা মিললেও খোঁজ মেলেনি নববধূ পূর্ণিমার।
সর্বশেষ রোববার (০৮ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে চারঘাট উপজেলার টাঙন পূর্বপাড়া এলাকার পদ্মা নদী থেকে পূর্ণিমার খালা আঁখি খাতুনের (২৫) ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেষ মরদেহটি উদ্ধারের পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার কথাও জানান তিনি।
দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ সাত জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরা হলেন- পূর্ণিমার চাচা শামীম (৪০), চাচি মনি বেগম (৩৫), তাদের মেয়ে রশ্মি (১০), পূর্ণিমার দুলাভাই রতন আলী (২৮), ভাগনি মরিয়ম (৮), খালাতো ভাই এখলাস (২৮) ও ফুফাতো বোনের মেয়ে রুবাইয়া (১০)।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছেন বর আসাদুজ্জামান রুমনসহ ৩২ যাত্রী। তারা সবাই নববধূ পূর্ণিমার পরিবারের। নববধূকে হারিয়ে পদ্মাপারে বসে কেঁদেছেন স্বামী রুমন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (০৫ মার্চ) পদ্মার ওপারের পবা উপজেলার চরখিদিরপুর এলাকার ইনসার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমনের সঙ্গে একই উপজেলার ডাঙেরহাট এলাকার শাহীন আলীর মেয়ে সুইটি খাতুন পূর্ণিমার বিয়ে হয়। শুক্রবার (৬ মার্চ) বরের বাড়ি থেকে দুটি নৌকায় বর-কনেকে নিয়ে আসছিল কনেপক্ষ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর ডিসির বাংলো এলাকার পদ্মা নদীতে বরযাত্রীবাহী নৌকা দুটি ডুবে যায়। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
স্বামী-সংসার নিয়ে হাজারো স্বপ্ন ছিল নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমার। শুক্রবার (০৬ মার্চ) বিয়ের পর নতুন ভুবনে পা পড়েছিল তার। তার মেহেদি রাঙা হাত ধরে জীবনভর পাশে থাকার কথাও দিয়েছিলেন বর আসাদুজ্জামান রুমন। কিন্তু নিয়তি তাদের এই মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে ফেলল নিমেষেই। কালিনী পদ্মায় মিশে গেলো লাল রঙ ভালোবাসা। পরনের লাল বেনারশি ফিরে এসেছে বিষাদের ছায়া হয়ে।
যেভাবে পদ্মার গহীনে তলিয়ে যান পূর্ণিমা; নববধূ পূর্ণিমার সঙ্গে একই নৌকায় ছিলেন তার আত্মীয় টুলু বেগম। নৌকাডুবিতে তিনি প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। তিনিই জানালেন কীভাবে তলিয়ে গেছেন পূর্ণিমা।
প্রাণ নিয়ে ফেরা এই নারীর ভাষ্য, নৌকাডুবির পর প্রাণ বাঁচাতে তিনি পরনের শাড়ি খুলে ফেলেন। এরপর ভাসমান চরাট ধরে ভাসছিলেন। ওই সময় তিনি পূর্ণিমাকে হাবুডুবু খেতে দেখেন। কপালের টিকলি দেখে তিনি তাকে চিনতে পারেন। প্রাণ বাঁচাতে তিনি তাকে পরনের শাড়ি খুলে ফেলতে বলেন। এরপর শাড়ি খোলারচেষ্টাও করছিলেন পূর্ণিমা। কিন্তু পরক্ষণেই তলিয়ে যান। অবশ্য শনিবার (০৭ মার্চ) একে একে ভেসে উঠল বাবা-মেয়েসহ ৬ জনের লাশ।