বহাল তবিয়তে চরফ্যাশনের খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা

জাহিদুলের অবহেলায় হতাশায় কার্ডধারী বঞ্চিত কৃষকরা

(ফাইল ছবি)

ফলোআপ

চরফ্যাশন উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে ৬ হাজার ৮শ টন ধান কেনার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সেখানকার উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের উদাসিনতা আর অবহলোর কারণে কার্ডধারী কৃষকরা এখন হতাশায় ভুগছেন। তারা তাদের ধান কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি যদি সঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে সিন্ডিকেট না করে ন্যায্য কার্ডধারী কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতেন তাহলে এখন কৃষকদের দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হতো না। তারা সরকার কর্তৃক ন্যায্য দাম পেয়েই ধান বিক্রি করতে পারতো। কিন্তু জাহিদুলের সমন্বয়ে প্রভাবশালীদের একটি সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যারা সঠিক কার্ডধারী কৃষক নয় তাদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছেন জাহিদুল সহ ওই সিন্ডিকেট। এতে যেমন লাভ হয়েছে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের, তেমনি লাভ হয়েছে নামধারী কিছু কৃষকদের। জাহিদুলের এমন অবহেলা আর অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে কৃষকরা তার অপসারণ চেয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলার ধান সংগ্রহ সময়ের অনিয়ম আর সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে গত ০২ মার্চ দৈনিক ভোলার বাণী পত্রিকায় “ভোলার চরফ্যাশনে ধান কেনায় সিন্ডিকেট ॥ বঞ্চিত কার্ডধারী চাষীরা” শীর্ষক নিউজ প্রকাশ হয়। শুধু ভোলার বাণী-ই নয় তাদের এ সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অনিয়ম এর সংবাদ অন্যান্য স্থানীয় পত্রিকা, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে নিয়ে গড়ে উঠা একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা উপরী নিয়ে সিন্ডিকেট থেকেই এই ধান কিনে গুদামজাত করেছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি মূল্যে গুদামে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, হাতে গোনা কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গুদামে ধান বিক্রির সুযোগ পেয়েছে। ওইসহ প্রভাবশালী ব্যক্তি গুদামে ১শ’ থেকে দেড়শ বা ২শ টন করেও ধান দিয়েছে। ভোলা জেলার বাইরের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কিনে গুদাম ভরাট করেছেন। তাদের এ সিন্ডিকেটের কারণে স্থানীয় কৃষকরা সরাসারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেনি।
শশিভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের মৌসুমী লটারির মাধ্যেমে নির্বাচিত কৃষক কামাল হোসেন জানান, আমার নামের কৃষিকার্ড স্থানীয় আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিয়ে গেছে। আমিও আমার উৎপাদিত ধান ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারিনি।
কৃষিকার্ড প্রাপ্ত কৃষক কবির হোসেন জানান, কৃষিকার্ড থাকা সত্ত্বেও আমার ধান গুধামে বিক্রি করতে পারিনি। স্থানীয় নেতারা প্রকৃত কৃষকের ধান ক্রয় না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করছেন। প্রকৃত কৃষকরা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
শুধু কামাল হোসেন, কবির হোসেন নয় এমন অনেক প্রকৃত কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন যারা তাদের কার্ড থাকা সত্ত্বেও ধান বিক্রি করতে পারেন নি। তরা এখন দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ধানের সঠিক দাম না পাওয়া নিয়ে। সরকারের কাছে যদি তারা ধান বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে তারা ন্যায্য দাম পেতেন। এতে তাদের উপকারই হতো। কিন্তু এখন তারা এ ধান লোকাল বাজারে বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় নেই। তাই তারা ধানের সঠিক দাম না পাওয়ার সংকায় রয়েছেন। জাহিদুলের অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে সেখানকার কৃষকরা তার অপসারণ চেয়েছেন। কিন্তু বহাল তবিয়তেই আছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত কার্ডধারীদের কাছ থেকেই ধান ক্রয় করেছি। কার্ডধারী কৃষক ছিল অনেক বেশি। তাই অনেক কৃষক তাদের ধান বিক্রি করতে পারেনি। টাকার বিনিময়ে এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কার্ড বিহীন অনেক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন, আমার বিরুদ্ধে আপনারা যা খুশি লিখেন, আমার কিছুই হইবো না ও আমার যায় আসে না।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান রাজুর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপায়ন্তুর না পেয়ে তার ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাতেও তিনি কোন সদুত্তর দেন নি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।