সর্বশেষঃ

চরফ্যাশন ভূমি অফিস ডিসি অফিসে হস্তান্ত করার দাবী

আমরা দোকর, তৃকর এর যাতাকল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং বাসস্থান অন্যতম। এর মধ্যে যদি কোন ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে তখনই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হয়। তাদের ভিতরে যখন দুর্নীতি লালন-পালন করা হয়, তখন আল্লাহ ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। বলছি ভোলা জেলার ভূমি অফিসগুলোর কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মকান্ড নিয়ে। দোকর, তৃকর শব্দগুলো সাধারণ মানুষ বা হত দরিদ্ররা ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না। ধনিরা হয়তো জানেই না এ শব্দগুলো কোথায় ব্যবহৃত হয়। জানার কথাও না। কারণ তারা তো আর নদী সিকস্তীর মধ্যে পড়ে না ? একজন হত দরিদ্র বা নদী সিকস্তি অসহায় পরিবারের জন্য সরকার ৫, ৩, ১.৫, ১ একর জমি বন্দোবস্ত দেন, যাতে তারা বাড়ী-ঘর তুলে এবং চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করতে পারে। আর সেই জমিটুকুতে ভূমি অফিসের কিছু তহসিলদার, সার্ভেয়ার ও তাদের দালালদের চোখ পড়ে তখনই ঘটে দোকর, তৃ-কর এর যাতাকলে। সমাজের কিছু লোভী ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে প্রথমেই করেন দোকর। অর্থাৎ ওই জমিতে আরেকটি দাগ বসিয়ে খতিয়ান খুলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। যখন আইনী মারপ্যাচে পড়ে যায়, তখনই আরেকজন দাঁড় করিয়ে করেন তৃ-কর। এইভাবে হত দরিদ্র, অভাবী, অবহেলিত, নিঃস্বরা হয়ে যান আরো নিঃস্ব। চরফ্যাশন ভূমি অফিসে অনুসন্ধানকালে বেরিয়ে আসে শত শত অভিযোগ।
ভুক্তভোগী রিয়াদ উদ্দিন জানান, তার বাবা সরকারের কাছ থেকে ১৯৫৪-৫৫ সালে ১৮৩ এফ, দাগ নং-১৯০৪, চর মঙ্গল, কলমি, চরফ্যাশন ঠিকানায় ৫ একর জমি বন্দোবস্ত নেন এবং সরকার কবুলিয়ত সম্পন্ন করে রেজিষ্ট্রি করে দেন। ৫০ বছর পর চরফ্যাশন ভূমি অফিসের সহযোগিতায় ফারুক সিকদার (০১৭৩৩৮৯৬৬১২), খতিয়ান ফারুক (০১৭২৮৪১৫২৯০) গংরা ওই জমিতেই ১১৬৭ এফ, ১১৬৮ এফ, ১১৬৪ এফ/৯৯-২০০০ বন্দোবস্ত নিয়ে ৫৩৬, ৫৩৭, ৫৩৮ নং খতিয়ান খোলেন। পরবর্তীতে এই বন্দোবস্ত কেইসের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যার দেওয়ানী নং-১৫০/৮। গত ২৫/১০/১৬ ইং তারিখে বাদীর পক্ষে বিরোধীয় বন্দোবস্ত কেইস ৩টিকে দো-কর, ও অকার্যকর মর্মে আদালত খতিয়ান খারিজ করে দেন।
আবেদনকারী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুকুলে বিস্তারিত জানিয়ে দরখাস্ত করিলে জেলা প্রশাসক তৎকালীন বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল হালিমের কাছে প্রেরণ করেন। জনাব আব্দুল হালিম গত ২০/০৩/১৭ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) চরফ্যাশন এর কাছে মতামত চান। যার স্মারক নং-০৫,১০,০৯০০,০০৫,০৭,০১০,১৭-৪৫৪। পরবর্তীতে ২৯৬ স্মারক এ ২৩/০৫/১৭ ইং তারিখে মোঃ আমিনুল ইসলাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) চরফ্যাশন বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর কাছে মতামত ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে ১১/০৪/১৯ এ ৪৭৭ স্মারক তারিখে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জগৎবন্ধু মন্ডল, সহকারী ভূমি চরফ্যাশনকে যেহেতু আদালত উক্ত ৩টি খতিয়ান বাজেয়াপ্ত করেন তাই আপনাকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা গেল।
আদালত ও জেলা প্রশাসন থেকে বিবাদীর জমি বাজেয়াপ্ত হওয়ার পর বিবাদীরা ওই জমিতে আবার তৃকর কাগজ তৈরী করেন এবং চিরস্থায়ীভাবে জমি ভোগ দখল করার জন্য পাকাপোক্ত হয়ে বসেন। তিনি বলেন, আজ ১০ বছরের মত হলো জমির কাছে যেতে পারছি না। যখনই আইনের আশ্রয় নেই, তখনই ভুমি অফিস এবং রাজনৈতিক প্রভাব সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি চাই আমার মত আর কেহ যেন এরকম যাতাকরে না পরে। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এমন হাজার হাজার ঘটনা চরফ্যাশন ভূমি অফিসের চতুপার্শে ঘুরপাক খাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, তার জমি দোকর করে দখল করে নিয়ে গেছে। এখন তিনি ভূমি অফিস আর রাজনৈতিক নেতাদের পিছণে হাঁটতে হাঁটতে টাকাও শেষে, জুতাও শেষে। তিনি আরো বলেন, মানুষ তো ভালো কথা, চরফ্যাশন ভুমি অফিসের প্রত্যেকটা দরজা-জানালা পয়সা চায়।
তিনি আপেক্ষপ করে বলেন, এই অফিস যদি ভোলা ডিসি অফিসে নিয়ে যেত তাহলে হয়তো এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতাম না। পাঠক চরফ্যাশন ভূমি অফিসে অনিয়ম আর দুর্নীতির আংশিক তুলে ধরা হলো।
খোজ নিয়ে যানা যায়, এমন হাজার হাজার ব্যক্তি আছে যারা রাজনৈতিক নেতা, তহশিলদার, সার্ভেয়ার, এসিল্যান্ড এমনকি ইউএনও অফিসে হাটতে হাটতে, ফাইল টানতে টানতে কেউ কবরে গেছেন, কেউবা যাবার পথে, আবার কেউবা ঘর ভিটা হারিয়েছে, কেউ হয়েছেন নিঃস্ব।
বোরহানউদ্দিন, দৌলতখা’র চিত্র এর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। লালমোহন, তজুমদ্দিন, মনপুরাসহ পরবর্তীতে সকল ভূমি অফিসের বাস্তব চিত্র তুলে ধরবো কিভাবে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত অবৈধ টাকা ভাগ হয়, কোথায় ২ নাম্বার খতিয়ান তৈরী হয়, আবার কোথাও ম্যাপ তৈরী হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।