বেহুন্দি ও কারেন্ট জাল দিয়ে চরফ্যাশনে অবাধে চলছে মাছ শিকার

বৃহৎ নদী আর সাগর বেষ্টিত দ্বীপ জনপদ ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার তেতুলিয়া নদীতে সরকারি আইন অমান্য করে কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জাটকা, ডিমওয়ালা বিভিন্ন মাছের পোনাসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অকালে মারা যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, চরফ্যাশনের তেতুলিয়া ও সাগর মোহনায় জেগে উঠা চরাঞ্চলের অধিকাংশই গরিব ও অশিতি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। দিনমজুরি, কৃষিকাজ ও মাছ ধরার টাকা দিয়েই কষ্টেসিষ্টে চলে ওদের সংসার। না, চলে না, চালিয়ে নেয় ওরা। সন্তানদের মাছ খাওয়ার আবদার থাকলে ভাতের খিদে মেটাতে মাছ বিক্রি করে দেয় ওরা । উপকূলের এই অবহেলিত মানুষ অধিকাংশই নদীভাঙনের শিকার ও ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে তাদের বসবাস। এদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার বদলে বাবার হাত ধরে নদীতে মাছ ধরতে যায়। এদের অসচেতনতার ফসল নিষিদ্ধ বেহুন্দিজাল ও কারেন্ট জালের দৌরাত্ম্য। ছোট ছোট মাছের সঙ্গে মাছের ডিম পর্যন্ত তুলে নিয়ে আসে বেহুন্দি জাল জাল দিয়ে।ওরা সরকারী আইনও জীববৈচিত্র্যের য়তি বোঝে না। ওদের অসচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা দিন দিন মাছশূন্য করে তুলছে নদীগুলোকে।
গত ২০ ও ২১শে ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) চরফ্যাশন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর বকশীঘাট, মুজিব নগর, ভাড়ানীর ঘাট, গাছিরখাল, ঘোষেরহাট, বাংলাবাজার ও কাসেম মিয়ার হাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জেলেরা বেহুন্দিজাল ও কারেন্টজাল পেতে মাছ ধরছেন। এসব জালে বড় মাছের পাশাপাশি ধরা পড়ছে জাটকা এবং পাঙাশ, রুই, কাতল ও আইড় মাছের পোনা। এ ছাড়া জালে ডিমওয়ালা পুঁটি, ট্যাংরা, বজুরি, কই, পাবদা, ঢেলা ও বাইলা মাছ; ব্যাঙ, সাপ ও কুঁচেসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও আটকা পড়ছে।
জেলেদের কথা শুনে মনে হয় যেন, সরকারি আইন অমান্য করে কারেন্টজাল ও বেহুন্দিজাল ফেলে নদীতে মাছ ধরা তেমন কোনো অপরাধই নয়। তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, কতিপয় প্রভাবশালী দালাল জেলেদের এক প্রকার জোরপূর্বক বেহুন্দীজাল, মশারিজাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে রেণু নিধন করাচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ঘোষের হাট এলাকার জেলে জামাল ও ইউনুছ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কারেন্ট ও বেহুন্দিজালে মাছ ধরা নিষেধ, সেটা জানেন ? তবু এই জাল পাতেন ? তারা দুজনেই বললেন, আইন ও নিষেধাজ্ঞা মানলে পেটে খাবার জুটবে না।
এদিকে তেতুলিয়াপাড়ের জেলেরা বলেন, নদীতে বেহুন্দি ও কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে এর উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু তা না করে নদীতে এসে জেলেদের ধাওয়া করে, জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করে এবং জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, সারাবছরই এ সমস্ত অবৈধ জালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বেহুন্দিজাল, কারেন্ট জাল ও অন্য অবৈধ জাল অপসারণে চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে, তবে জেলেদের বিজিএফ কার্ড ও অন্যান্য কাজের কারনে আমরা গত এক সাপ্তাহে নদীতে অভিযান চালাতে পারিনি। তবে আগামী সাপ্তাহ থেকে এ সমস্ত অবৈধ জালের বিরুদ্ধে পুনারায় নদীতে অভিযান চালু করবেন বলে জানান এ মৎস্য কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page