দখলবাজদের হানায় লালমোহন খাল
ভোলার লালমোহন লঞ্চঘাট থেকে সদর বাজারের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি দিয়ে একসময় যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল করতো। সময়ের পরিক্রমায় লঞ্চ ঘাটটির নতুন স্থান হলেও ধীরে ধীরে খালটি দখলের পায়তারা করতে থাকে স্বার্থান্বেষী মহল।
খাল বাঁচাতে ও দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় দখলের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ফলে ময়লা ফালানোর ডাষ্টবিন হিসেবেও খালটিকে বেছে নিয়েছে কেউ কেউ সাথে কিছু প্রতিষ্ঠান।
খালটিতে লঞ্চ চলাচল না থাকলেও এ স্থান দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালমোহন বাজার ব্যবসায়ীদের নানাবিধ পণ্য আনা নেয়া করা হয় বলে খালটি বাজার ব্যবসায়ীদের প্রাণের স্পন্দন।
শুধু তাই নয়, লালমোহন বাজারের ভিতরে থাকা কয়েকটি পুকুর বালু ভরাট ও মার্কেট হয়ে যাওয়ার ফলে অগ্নিকাণ্ডের মত ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পানির জোগান দিতে খালটির বিকল্প নেই।
লালমোহনে চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীক কাজে ওপারের রাঙ্গাবালী, জাহাজমারা, ঢালচরসহ আরও কয়েকটি এলাকার মানুষের জন্য নৌরুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় খালটি। বাজারের জলাবদ্ধতা নিরসনে এ খালটির ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
সর্বপরি খালটি বেঁচে থাকা লালমোহন বাজার ব্যবসায়ীসহ সকলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ময়লা, আবর্জনার স্তুপসহ দখলবাজদের হানার কারণে নাব্যতা হারাচ্ছে খালটি। এসব দখলদারিত্ব সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নাকের ডগায় চললেও তাদের কোনও তৎপরতা দেখছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারের অনেক ব্যবসায়ী।
বাজারের তুলা ব্যবসায়ী জালাল ও কমরুদ্দিন জানান, নারায়নগঞ্জের ইস্পাহানি থেকে নৌ-রুটে এ খাল দিয়ে তুলা আনেন তারা। প্রতি বছরে প্রায় ৭০ টন তুলা আনেন তারা। সড়ক পথের চেয়ে নৌ-পথে খরচ কম। তাই ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে তুলার দাম রাখা যায় বলেও জানান তারা।
তাদের মতে খালটির নাব্যতা হারিয়ে সংকটে পড়লে লালমোহন বাজারের ব্যবসায়ীরাও সংকটে পড়বে। শুধু তাই নয়, পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে হিমশিম খেতে হবে পৌরবাসীকেও।
লালমোহন বাজার মুড়ি আড়ৎদার মিজান হাওলাদার বলেন, লালমোহনের বিভিন্ন আড়তে প্রতিবছর প্রায় ৫শ টন মুড়ি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে। যার একমাত্র রুট এ খালটি। নৌপথে পণ্য আমদানিতে খরচ কম তাই বাজারে এর মূল্যও স্বাভাবিক রাখা যায় বলেও জানান তিনি।
লালমোহন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলী আহমদ (বিএ) বলেন, লালমোহন বাজারটি ভোলা জেলার ব্যবসায়ীক প্রাণ কেন্দ্র। বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন, মনপুরাসহ একাধিক উপজেলার ব্যবসায়ীগণ এ বাজার থেকে তাদের মালামাল সংগ্রহ করেন। আর এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নৌ-রুটে আনা নেয়া করা হয়। অথচ একটি কুচক্রীমহল খালটি দখলে উঠেপড়ে লেগেছে। এতে করে খালে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ার ফলে সড়ক পথে পণ্য আনতে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে ভোগ্য পণ্যসহ সকল মালামালের দাম বেশি হচ্ছে। খালটি দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে একাধিকবার জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কমকতা (লালমোহন এল.এস.ডি) মো. জলিল সিকদার বলেন, প্রতিবছর লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় ৮হাজার টন সরকারি চাল গমসহ বিভিন্ন শস্য আসে লালমোহন খাদ্য গুদামে আসে। যার পুরোটাই নৌ-পথ দিয়ে এবং আমাদের গুদামে আসতে এ খালটিই একমাত্র রুট। আগে বর্ষা মৌসুমে এখানে ৬০০টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ আসতো। নাব্যতা সংকটের কারণে তা ৩০০টনের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে মালামাল আনলোড করা সম্ভব হয়না।
এ বিষয়টি নিয়ে ২৮ জুন ২০১৯ সালে ‘নাজিরপুর খাল হতে লালমোহন খাদ্য গুদামে আসতে শাখা খাল ড্রেজিং করণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে’ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এর পূর্বেও ‘সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পে খাদ্যশস্য বিলি-বিতরণ ব্যহত হওয়ার আশংকায়’ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালেও একটি আবেদন করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, অবৈধ দখল হওয়া যতগুলো খাল রয়েছে, আমরা সবগুলো খালের প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসক (ভোলা) মহোদয়ের বরাদ্ধ পাওয়ার পর আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নামব।
লালমোহন বাজার ব্যবসায়ীসহ সকলের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ দখল উচ্ছেদ পূর্বক খালটি কে খনন করে দূষণমুক্ত কর হোক। খালের নাব্যতা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।