এমএ পাশ করেও হোটেলে থালাবাসন মাজেন নজরুল

প্রয়োজন বা শখের বশে শিক্ষার্থী বা যুবকরা বিলাসবহুল হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। খণ্ডকালিন সেসব কাজের রয়েছে আলাদা ধরণ ও সম্মান। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়েও অনেকই চাকরি পারছেন না। তারই এক উদাহরণ নাটোরের লক্ষীপুর ইউনিয়নের বড়বড়িয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম। মাস্টার্স পাশ করেও চাকরি না পেয়ে জীবিকার তাগিদে তিনি কাজ করছেন খাবার হোটেলে।

নাটোর শহরের চকরামপুর এলাকার বিসমিল্লাহ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। সেখানেই কাজ করেন নজরুল। সেখানেও বাধা কথিত সামাজিকতা! বন্ধু, স্বজন আর পরিচিতদের নজর এড়াতে হোটেলটির পেছনের অংশে থালাবাসন ধোয়ার কাজ বেছে নিয়েছেন তিনি।

তার বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের বড়বড়িয়া গ্রামে। দরিদ্র কৃষক বাবার ৮ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে তিনিই সবার ছোট। বাবা জমির উদ্দীনের মৃত্যুর পর অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেই মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ যোগাড় করেছেন। ২০১৬ সালে নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাশ করার পর স্বপ্ন ছিল সরকারি-বেসরকারি যা-ই হোক একটা চাকরি করে সুখের জীবন কাটাবেন।

কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। এমএ পাস করার পর শত চেষ্টা করেও তেমন কোনো চাকরির বন্দোবস্ত করতে পারেননি তিনি। কিছুদিন একটি কিন্টারগার্ডেন স্কুলে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেছেন।

এদিকে, বাবার মৃত্যুর পর সংসারের ভার এসে পড়ে তার কাঁধে। মায়ের অসুস্থতার কারণে বিয়েও করতে হয়।

বর্তমানে মা আনোয়ারা বেওয়া, বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী কুইন খাতুন এবং চার বছরের ছেলে হিমেলসহ চার সদস্যের সংসার চালানোর জন্য দিনে তিনি অন্যের জমিতে দিনমজুর কাজ করেন। কিন্তু গত তিনমাস ধরে সেই কাজও ঠিকমতো না পাওয়ায় হোটেলে থালা-বাসন মাজার কাজ শুরু করেন তিনি।

নজরুল জানান, রাত ৯টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানিতে বাসন ধোয়ার কাজ করে বেতন পান তিনশো টাকা। আর কাজ শেষে দুটি টিউশনি করেন। এভাবে কোনোমতে চলছে সংসার।

তিনি আরও জানান, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে একের পর এক আবেদন করেছেন। ব্যাংক ড্রাফট আর পে অর্ডার করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। কাজ হয়নি। বেসরকারি স্কুল-কলেজে চাকরির জন্য আবেদন করলেই ১০-১২ লাখ টাকা ডোনেশন চাওয়া হয়।

দিন-রাত টানা ঠাণ্ডা পানিতে কাজের পরিবর্তে নজরুলকে হোটেল কর্তৃপক্ষ অন্য কাজের জন্য বললেও পরিচিতদের ভয়ে সে পেছনে লুকিয়েই কাজ করে।

নাটোরের পরিবহন ব্যবসায়ী ও ওই হোটেলের নিয়মিত ভোক্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, শিক্ষিত যুবককে হোটেলে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করতে দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন জানান, হোটেল বয় হিসেবে মাস্টার্স পাশ যুবকের কাজ করার বিষয়টি দুঃখজনক। তার একটি চাকরির ব্যবস্থা হলে ভাল হতো এমন মন্তব্য করে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সামর্থ্যবানদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page