ভোলায় কর্মসূচীর অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা
মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করতে পারলে বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব
আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের সকল উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে। আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের হার অনেকটা কমলেও তা সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিয়ের হার জাতীয় পর্যায়ে ৫১.৪%। বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে ৫৫.৬% হলেও ভোলাতে সেই হার বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৩%। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করতে পারলে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এসময় কিশোর-কিশোরীরা বাল্যবিয়ে রোধে করণীয় বিষয়ক বড়দের সাথে কিশোর-কিশোরীর সংলাপে অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ভোলা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ইউনিসেফের সহায়তায় ও কোস্ট ট্রাস্টের সমন্বিত শিশু বিবাহ প্রতিরোধ কর্মসূচী (আইইসিএম) প্রকল্পের আয়োজনে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা জানায়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ আলম ছিদ্দিক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক ফেরদৌউস আরা রুমী, ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা মো: জামিল হোসেন, কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের পিসি মো: মিজানুর রহমান প্রমুখ। স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো: মাহামুদুর রহমান সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান, ইউনিসেফ বরিশাল বিভাগীয় প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মহসিন আল ফারুক।
এসময় আলোচনায় অংশ নেয় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো: ইকবাল হোসেন, প্রবীন সাংবাদিক আবু তাহের, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: দেলোয়ার হোসেন, কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মো: ইকবাল হোসেন, কোস্ট ট্রাস্ট টিম লিডার রাশিদা বেগম, জাহানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: ইউনুছ মিয়া, কোস্ট ট্রাস্টের সিনিয়র সমন্বয়কারী মো: জহিরুল ইসলাম, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি নেয়ামত উল্ল্যাহ, ইউনিয়ন তথ্য উদ্যোক্তা মো: ইব্রাহীম। এসময় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আবিদ হাছান, সানজেদুল ইসলাম, সেতু, রাকিব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, ভোলা জেলায় প্রায় ৩৬টির মতো চর রয়েছে। এই চরে প্রায় কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করে থাকে। পাশাপাশি বেড়িঁবাধ ও নৌকাবাসী (মানত সম্প্রদায়) রয়েছে। এই জায়গায় মেয়েদের বাল্যবিয়ের প্রবনতা বেশি। ফলে ১৫ বছরের নিচে অধিকাংশ কিশোরীর বিয়ে হচ্ছে। বাল্য বিয়ে হওয়ার ফলে মেয়েরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। আবার অনেকের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে বাল্য বিয়ে। মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ বছর আগে বিয়ে দেয়া যাবেনা। অভিভাবক, চেয়ারম্যান, মেম্বার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বক্ষেত্রে সকলের আরো সচেতন হতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। ছেলেমেয়ের কোন বেদাবেদ করা যাবেনা। সকলেই সমান। তাদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
যারা ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি করে বাল্য বিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ভুয়া বাল্য বিয়ের কারণে মেয়ে শিশুরা স্কুল থেকে ঝড়ে পরছে।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন অনেক বাল্যবিবাহ হচ্ছে। কিন্তু বাল্যবিবাহ আইন থাকার পর এর সঠিক প্রয়োগ নেই। নারী ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায় বাল্য বিবাহ। নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নয়ন অসম্ভব। কন্যা শিশুকে মেয়ে হিসাবে না দেখে মানুষ হিসাবে দেখার আহবান জানায়। তাই বাল্য বিয়ে রোধে সমাজের মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
এসময় কিশোর-কিশোরীরা জানায়, কিশোর-কিশোরীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষন, পড়ালেখার, চলাচলের নিরাপত্তা দিতে পারলে মেয়েরাই আগামীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বলে জানায়।
আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ভোলাতে ১৫ বছর এর নিচে বাল্য বিয়ের হার শূন্যর কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য ১৮ বছরের মধ্যে শিশু বিবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে শিশু বিবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ‘সমন্বিত শিশু বিবাহ প্রতিরোধ কর্মসূচী’ নামে প্রকল্পের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নে কাজ করেছে। এর মাধ্যমে প্রায় দুই শতাধিক বাল্যবিয়ে রোধ সহ নানা প্রশিক্ষন দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়ন করতে কাজ করেছেন।