লালমোহনে দাফনের ৯ দিন পর প্রতিবেশির মারধরে বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে সরগরম নির্বাচনী মাঠ
![](https://bholarbani.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটির নির্বাচনী প্রচারে মতাসীন আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সীমিত পরিসরে অভিযোগ আসছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। তবে অভিযোগ বেশি আসছে বিএনপি সমর্থিত (মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর) প্রার্থীদের কাছ থেকে। আর বিএনপি প্রার্থীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দুই সিটির রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা এসব কথা জানিয়েছেন। সেই অর্থে বলা যায়, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারে এখন সরগরম।
তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রার্থীদের কাছ থেকে আসা অভিযোগগুলো নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সমাধান করছে বলে জানা গেছে। এর ফলে নির্বাচনী মাঠে দুই পরে সহাবস্থান বিরাজ করছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপরে কয়েকদিন আগে রাজধানীর গাবতলীতে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালায়। মেয়র প্রার্থী হামলা ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। একইভাবে গত রোববার দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় দুই পক্ষের কর্মী-সর্মথকরা মারমুখী অবস্থানে ছিলেন। পরে আইনশৃড়খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দক্ষিণের চৌকস ও দক্ষ রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেনের সরাসরি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে উত্তর এবং দক্ষিণ সিটিতে প্রচারে গত নির্বাচনের তুলনায় এবার প্রচারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের প্রচার দৃশ্যমান রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এমন দৃশ্যমান প্রচার দেখা যায়নি কোনো জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে। দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল গত ২২ ডিসেম্বর ঘোষণার পর শুরুতে মারমুখি অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। গত ১১ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনের প্রচার শুরুতে বিএনপির তাদের সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর (সাধারণ ও সংরতি) প্রার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ আসছিল। বেশির ভাগ অভিযোগ ছিল, পোস্টার ছেঁড়া, নির্বাচনের প্রচার মাইক ভেঙে দেওয়া এবং ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনার জন্য বাড়ি বাড়ি যাওয়া কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করা। এমনকি নারী কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে বিএনপির সমর্থিতদের পক্ষ থেকে। এমনকি বিএনপির অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজে নির্বাচনের কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রেখে নির্বাচনের ফলকে নিজেদের অনুকূলে রাখার চেষ্টাও চালিয়েছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অনেককে নির্বাচন থেকে বাদ দিয়ে ইসি নিরপেতার প্রমাণ দিয়েছে। এতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক প্রার্থী ও কর্মীদের মধ্যে উদ্দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির সহকারী রিটার্নিং অফিসারেরা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ইসির দঢ়-মনোভাবের কারণে এখনো বলা যায়, নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রচারসামগ্রী দৃশ্যমান রয়েছে। নির্বাচনের প্রচারে হামলা ও ভয়ভীতির অভিযোগ কমছে। তবে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা বলছেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট আছি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। এটা সব সময় থাকে এখানেও ব্যতীক্রম নয়। তবে আমরা চাইছি, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা সম্পন্ন করতে।
অভিযোগ কেমন আসছে জানতে চাইলে উত্তরের রিটার্নিং অফিসার ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাশেম বলেন, আমার সিটি এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। বেশির ভাগ অভিযোগ আসছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কাছ থেকে। সরাসরি দল থেকেও কিছু অভিযোগ আসছে। আমি দুই পক্ষের প্রার্থীকে ডেকে অভিযোগ খন্ডনের চেষ্টা করছি। তবে দুই পরে উপস্থিতিতে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই প্রার্থী সরাসরি নাকচ করছেন। পক্ষের আগামীতে এ ধরনের অভিযোগ আর আসবে এমন অঙ্গীকার করে আমার কার্যালয় ত্যাগ করছেন।
আর দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. আবদুল বাতেন বলেন, আমার সিটির অভিযোগগুলো আসামাত্র সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ডেকে অভিযোগ হস্তান্তর করে দিচ্ছি। তারা কেস টু কেস আলোচনা করে সমাধান করে দিচ্ছেন।
উত্তর ও দক্ষিণের সহকারী রিটার্নিং অফিসারেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনী প্রচারে কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ধরনের অভিযোগ সব সময় ছিল, এখনো আছে। আশা করি, আগামী ৩০ জানুয়ারি প্রচার শেষে নির্বাচনটিও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার। পুরো ঢাকা মহানগরীজুড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে পুরো এলাকা এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তবে পোস্টার ও ফেস্টুন ছেঁড়া এবং নির্বাচনী প্রচারে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অভিযোগের মধ্যে উত্তর সিটির ১নং ওয়ার্ডে বেশি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ওয়ার্ডে নৌকা সমর্থিত আফসার এবং ধানের শীষের সমর্থিত সেগুন দুজন প্রার্থী থাকলেও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে। প্রথমদিকে কোনো পোস্টার ছাঁটাতে না পারলেও ইসির রিটার্নিং অফিসার ও ইসির নীতি-নির্ধারকদের হস্তক্ষেপে দুই-একদিন আগে পোস্টার ছাঁটানো শুরু করেছে বলে মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনের ইসিতে দেওয়া এক অভিযোগের তথ্যে দেখা গেছে। দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে এই নির্বাচনে ইসির চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এর জন্য ইভিএমের ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে ইসি। আগের নির্বাচনগুলো ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় কিছু অস্বস্থির মধ্যে ঢাকা সিটি নির্বাচন দিয়ে স্বস্থিতে ফিরতে মরিয়া ইসি।