বাড়িতে যাওয়ার পথে গণধর্ষণের শিকার গার্মেন্টস কর্মী
‘ওই নারীকে খাওয়ানো ফলের জুসের ভেতর থাকা ওষুধের ঘোর এখনও কাটেনি’
সাভারের আশুলিয়া থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন জামালপুরের এক নারী গার্মেন্টসকর্মী (২৬)।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকায় রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে সেখান থেকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের চাঁনধরা এলাকায় পিকআপে উঠার পর বর্বরোচিত এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। তার বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গার্মেন্টসকর্মী জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গার্মেন্টস ছুটি হলে তিনি আশুলিয়া থেকে বাসে গাজীপুরের চানধরা এলাকায় নামেন। সেখান থেকে জামালপুরের উদ্দেশে তিনি একটি পিকআপ গাড়িতে উঠেন।
এসময় ওই পিকআপে আগে থেকেই বসে থাকা মাঝবয়সী এক লোক নিজেকে আগে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন বলে ওই নারীকে অভয় দেন। ওই নারী জামালপুরে যাবেন শুনে পিকআপটির চালকও বলে তারাও জামালপুরে যাবে। পিকআপটি চানধরা থেকে ছাড়ার পর কিছুদূর গিয়ে অন্যযাত্রীরা নেমে গেলেও তার পাশে থাকা যাত্রীটি জুসের প্যাকেটটি ওই নারীকে খেতে দেন। জুস খাওয়ার পরই অজ্ঞান হয়ে যান ওই গার্মেন্টস কর্মী। এজন্য তাকে কোথায় ধর্ষণ করা হয়েছিল, কিংবা কী করে সাগরদিঘীতে এলেন, তার কিছুই বলতে পারছেন না তিনি।
এসময় নির্যাতনকারীরা তার ব্যাগে থাকা একজোড়া রূপার নূপুর, একসেট জামা, নগদ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন সেটটি নিয়ে যায়।
পরদিন শুক্রবার ভোরে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকায় রাস্তার পাশে ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। তার গলায় গার্মেন্টেসের পরিচয়পত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের জানান। একই সাথে স্থানীয়রা ওই নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে জামালপুরের শাহবাজপুরের মির্জাপুর থেকে ওই নারীর পরিবারের লোকজন সাগরদিঘী থেকে তাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। গতকাল শনিবার বিকেলে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান ফকির এ প্রসঙ্গে বলেন, “ওই নারীকে খাওয়ানো ফলের জুসের ভেতর থাকা ওষুধের ঘোর এখনও কাটেনি। তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে কর্তব্যরত নার্সরা। চিকিৎসাধীন ওই নারীর জ্ঞান ফিরলেও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তিও নেই তার।” স্মরণশক্তিও লোপ পেয়েছে বলেও তিনি জানান।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান বলেন, “একজন এসআইকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ওই নারীর পরিচয় ও ঘটনার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। ওই নারীর দেওয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থল ঘাটাইলের সাগরদিঘী হওয়ায় ঘাটাইল থানাতেই মামলাটি দায়ের করার জন্য তার স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”