সর্বশেষঃ

কোন পথে যাবে মিয়ানমার

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ এবং এ জাতিগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য মিয়ানমারকে চার দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে)। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে দেশটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার আইসিজে এ আদেশ শোনায়। মামলায় গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক জেনোসাইড কনভেনশন ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘের ১৯৫৬ সালের গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আইসিজের এ নির্দেশনা মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে মিয়ানমারের। এ আদেশ উপেক্ষা করলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকেও দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত

ইয়াং হি লিও বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ ও তাদের সুরক্ষায় আইসিজে যে আদেশ দিয়েছেন, তা মিয়ানমারকে মানতে হবে। সর্বশেষ জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আদালতের বিধান অনুসারে এর আদেশ বা সিদ্ধান্তকে বাধ্যতামূলক বলেই মনে করেন সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আইসিজের সিদ্ধান্ত শক্ত বার্তা পাঠিয়েছে যে, বিশ্ব মিয়ানমারের পাশবিকতা সহ্য করবে না। তবে মিয়ানমার এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, তারা কোনো নির্দেশনা মানবে না।

গত বৃহস্পতিবারই জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক জানান, গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আইসিজের আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, মিয়ানমার এ আদেশ মেনে চলবে। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিব আদালতের বিধান অনুসারে এর আদেশ বা সিদ্ধান্তকে বাধ্যতামূলক বলেই মনে করেন। বিধান অনুসারে, আদালত কর্তৃক আদেশকৃত অস্থায়ী পদক্ষেপের নোটিশ তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদে পাঠাবেন মহাসচিব।

অন্যদিকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আইসিজের আদেশ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি পরিস্থিতির বিকৃত চিত্র উপস্থাপন করছে। তাদের নিজস্ব স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে রাখাইনে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলেও গণহত্যার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ফলে যে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে তা মিয়ানমারের বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আইসিজে মিয়ানমারের প্রতি যে নির্দেশগুলো দিয়েছে তা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক ও আপিলযোগ্য নয়। তা বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে বাধ্য করার কোনো উপায় নেই আদালতের।

আবার এ আদেশ নিয়ে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ দুই দেশ রাশিয়া ও চীন এখনো তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য বিশ্বজুড়ে মিয়ানমার তুমুল নিন্দিত হলেও ওই দুই দেশ বরাবরই তাদের সমর্থন দিয়ে গেছে। তাদের ভেটোর কারণেই নিরাপত্তা পরিষদও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তাই এবারও চীন-রাশিয়ার ভূমিকা আগের মতোই হবে বলে ধরে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের সবাই। ফলে আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নে বৈশ্বিক চাপ থাকলেও মিয়ানমার সেগুলো বাস্তবায়ন না করে উল্টো পথেই হাঁটতে পারে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।