সর্বশেষঃ

ড্রাইভার শিশু শ্রমিক, একটু মোটা হলেই ভাড়া দ্বিগুন, লাগেজের ভাড়াও গুনতে হয়, সন্ধ্যার পরে বোট চলাচল

সরকারী নিয়মনীতি না মেনেই চলছে স্প্রীড বোট ব্যবসা

আরে ভাই লেইখ্যা কি করবেন ? সরকার বন্ধ করতে পারে নায়, আমনেরা বন্ধ করবেন ? লঞ্চ মালিকরা আমাগো বিরুদ্ধে মামলা করছে, হেতেও লাভ হয় নায়। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে এভাবেই কথাগুলো শুনতে হয় এক স্প্রীড বোট ড্রাইভার সুমনের কাছ থেকে। এমনিতেই অবৈধ, তার উপর আবার শিশু শ্রমিক দিয়ে বোট চালায়, একটু মোটা হলেই ভাড়া নেয় দ্বিগুন, ঠিকমত লাইফ জ্যাকেটও দেয় না। এভাবেই বহাল তবিয়তে স্প্রীড বোট চালান সমিতির নেতারা। ড্রাইভাররা বোটের মালিককেও চিনেন না। চিনেন সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারীকে। আরো জানতে চাইলে ড্রাইভার সুমন বলেন, আমরা আলাউদ্দিন ও মোসলেহ উদ্দিন ভাইকে ছাড়া কাউকে চিনি না। তারাই আমাদের হর্তা-কর্তা।
স্প্রীড বোট যাত্রী আহত হাছনাঈন আহমেদ ভোলার বাণীকে বলেন, আমি বিএম কলেজে পড়ি। প্রতি সপ্তাহে যাতায়াত করি স্প্রীড বোট দিয়ে। যখনই স্প্রীড বোটে উঠি, তখন-ই দেখি ১৪/১৫ বছরের শিশুরা বোটের ড্রাইভার। তাদের নেই কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ। আজ (২১ জানুয়ারী মঙ্গলবার) আমি সকালে বরিশাল যাওয়ার জন্য বোটে উঠে বসি। এমন সময় বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে আসা স্প্রীড বোট আমাদের বোটকে স্ব-জোরে ধাক্কা দেয়। তাতে আমি গেডিতে (ঘাড়)-এ প্রচন্ড আঘাত পাই। ১০ মিনিটের মত অজ্ঞান হয়ে থাকি। জ্ঞান ফিরে দেখি বরিশাল থেকে আসা বোটের শিশু ড্রাইভার বোট রেখে পালাচ্ছে। আমিসহ বোটের অন্য যাত্রীরা সমিতির নেতাদের কাছে নালিশ করতে গেলে তারা কোন পাত্তাই দেয় নি। আমি চাই এ অবৈধ স্প্রীড বোট ব্যবসা বৈধতা নিয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালকদের দিয়ে বোট চালানো হোক।
অপর যাত্রী হিরন অভিযোগ করেন, এদের (ড্রাইভার) আচরণ মাস্তানের মত। লাইফ জ্যাকেট চাইলেও দেয় না। কিছুর তোন কিছু হইলেই গায়ের দিকে কুইধ্যা আইয়ে।
স্প্রীড বোট ঘাটের (ভেদুরিয়া)’র এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওরা (ড্রাইভার) যাত্রীদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করে। ছোট ছোট বাচ্চা দিয়ে বোট চালায়। ৪ থেকে ৫টির বেশী লাইফ জ্যাকেট রাখেন না। ভাড়া ১০-২০টাকা কম দিলে মারতে আসে। সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিনের এমন আচরণ, মনে হয় যেন তিনি এলাকার এমপি। আমি যতটুকু যানি কোন মালিক ঠিকমত মাসে ২-৩ হাজার টাকার বেশি নিতে পারে না। অথচ আলাউদ্দিন ও মোসলেহ উদ্দিনের দৈনিক ইনকাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ভেদুরিয়া থেকে লাহারহাট এর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। ভাড়া নেয়া হয় ১৩০ থেকে ১৫০টাকা। আর ভেদুরিয়া থেকে বরিশালের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার, সেখানে নেয়া হয় ২৫০টাকা। অনেকে যাত্রী-ই মনে করছেন এই ভাড়া একটু বেশি-ই নেয়া হয়। যাত্রীরা ভেদুরিয়া-টু-লাহারহাট এবং ভেদুরিয়া-টু-বরিশালের ভাড়া যদি কিছুটা কম নেয়া হত তা হলে যাত্রীদের উপকার হতো ও তাদের সহনীয় পর্যায়ে থাকতো।
আলমগীর, নাছির, অর্জুন চন্দ্র, নাছিমাসহ একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলে, চলাচলের সময় যাত্রীদের সাথে ব্যাগ ও লাগেজ থাকবেই। কিন্তু স্প্রীড বোট ড্রাইভাররা যাত্রীদের সাথে থাকা ব্যাগ ও লাগেজের জন্য ভাড়া আদায় করে। যাত্রীরা এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
সূত্রে আরো জানা যায়, স্প্রীড বোট চলাচলের ক্ষেত্রে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু এরুটের চলাচলকারী স্প্রীড বোটের মালিক ও চালকরা কোন নীতিমালা-ই মানছেন না। তারা তাদের মত করেই স্প্রীড বোট চালাচ্ছেন। অদক্ষ চালক, কুয়াশা ও রাতের বেলায় স্প্রীড বোট চলাচল করার কারণেই মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে স্প্রীড বোট মালিক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোলার বাণী’কে জানান, ২১ জানুয়ারী মঙ্গলবারে যে ঘটনাটি ঘটেছে এবং যাত্রী হাসনাঈন অসুস্থ্য হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, যে স্প্রীড বোট দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি বরিশালের, আর ড্রাইভারটিও ছোট (শিশু) ছিল।
স্প্রীড বোট ব্যবসার বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ আমাদেরকে লাইসেন্স দিবে। আমরা কাগজপত্র তৈরী করছি। তা দ্রুত মন্ত্রণালয়ে জমা দিবো। মামলার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতি স্প্রীড বোট মালিক সমিতির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে, তা চলমান রয়েছে। তবে অন্যান্য অভিযোগের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে ভোলা স্প্রীড বোট মালিক সমিতির সেক্রেটারী মোসলেহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি বিধায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি, অবৈধ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দৈনিক ভোলার বাণী’কে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক।
উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভোলার জনপ্রিয় অর্থোপেডিকস্ ডাক্তার সরোয়ারের পরিবারসহ স্প্রীড বোট যোগে বরিশাল যাওয়ার পথে সাহেবের হাট নামক স্থানে বরিশাল থেকে ভোলাগামী অপর একটি স্প্রীড বোটের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই ডাক্তারের স্ত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ থেকে ৪দিন পর তার নিখোঁজ মেয়ের লাশ পাওয়া যায়। এ সময় তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হলে বরিশালের স্প্রীড বোট মালিক সমিতির সভাপতি আটক হন এবং বেশ কয়েকদিন স্প্রীড বোট চলাচল বন্ধ ছিল, পরে তা আবার চালু হয়।
ভেদুরিয়া-টু-লাহারহাট এবং ভেদুরিয়া-টু-বরিশাল রুটে স্প্রীড বোট চলাচলে দক্ষ ও সরকারের নিয়মনীতিমালাই মেনেই স্প্রীড বোট মালিকরা এ ব্যবসা পরিচালনা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন ভোলার সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।