গ্রীনলাইন-এডভেঞ্চারের মহিলা যাত্রীরা নানাবিধ ভোগান্তিতে

ভোলার মানুষের বহু আকাঙ্খিত ও দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল নৌপথে দ্রুত সময়ে ভোলা-ঢাকা যাতায়াত ব্যবস্থা। তাদের এই কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ করতে খুশির বার্তা নিয়ে ভোলা-ঢাকা নৌপথে চালু হয় গ্রীনলাইন ও এডভেঞ্চার নামের নতুন দুটি অত্যাধুনিক হাই স্পিডের দিবা সার্ভিস নৌযান। কিন্তু এই সার্ভিস দুটির সুনামের অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে কিছু অব্যবস্থাপনা। আর এসব অব্যবস্থাপনা ও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে প্রায়ই নানাবিধ ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন নারী যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার সময় এডভেঞ্চার নামক দিবা সার্ভিসের নৌযানে উঠে বিপাকে পরেন সুমনা সুরমা নামের এক ভদ্র মহিলা। তিনি একা ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। কিন্তু লঞ্চের ভিতরে উঠে মহিলাদের সাথে মহিলা সিট না পেয়ে পুরুষের পাশে নীরুপায় হয়েই বসতে হয় তাকে। এ সময় তাকে বিপাকে পড়তে হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, এডভেঞ্চারে উঠে ভালো লাগলো কিন্তু যখন বধ্য হয়ে পুরুষদের পাশের সিটে বসতে হয়েছে তখন ভিষন খারাপ লেগেছে। তার কারণ হচ্ছে পুরুষ সিটের পাশে মহিলা সিট। তবে ভিতরে সিটগুলো এমনভাবে সজ্জিত করা হয়েছে যাতে করে পুরুষের গাঘেঁষে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

রুমা বেগম নামের আরেক মহিলা যাত্রী বলেন, অনেক সময় পুরুষ যাত্রীর পাশে বসলে তিনি মহিলাদের একা পেয়ে কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যেই নানান রকমের প্রশ্ন করতে দেখা যায়। বাধ্য হয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নানান অপ্রাসঙ্গীক কথা বলতে হয় তাদের সাথে। তখন একজন নারীর কাছে বিষয়টি অসহনীয় ও নীরুপায় হয়ে দাড়ায়।

শুক্রবার গ্রীনলাইন লঞ্চ যোগে ঢাকা থেকে ভোলায় আসেন ৬ মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে ছালমা বেগম নামের এক নারী। তিনি লঞ্চ সার্ভিসের প্রশংসার পাশাপাশি নতুন এক সমস্যার কথা জানান।

তিনি বলেন লঞ্চে আমার কোন সমস্যা হয়নি তবে একটু অসুবিধায় পড়েছি যখন বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় হয়েছে তখন। লঞ্চে বাচ্চাদের বুকের দুগ্ধ পান করানোর জন্য ভিন্ন কোন স্থান না থাকায় বিভ্রান্তি ও দুর্ভোগে পরতে হয়েছে আমাকে। নিরুপায় হয়ে পুরুষদের পাশে বসেই কোনো রকমে বাচ্চকে দুগ্ধ পান করাতে হয়েছে।

এমতাবস্থায় সুমনা সুরমা, রুমা ও ছালমা বেগমসহ একাধিক নারী যাত্রী লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান, দ্রুত সময়ের মধ্য যদি মহিলা যাত্রীদের জন্য গাড়ির সিটের মত ভিন্ন কয়টা সিট রাখা হতো এবং বাচ্চাদের মিল্ক ফিডিং এর জন্য যদি আলাদা ব্যবস্থা গ্রহন করা যেত তাহলে মহিলা যাত্রীরা পুরুষ যাত্রীদের মত স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে  যাতায়াত করতে পারতো।

ভোলা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, মহিলারা আসলেই অসহায় ও নীরুপায়। যখন লঞ্চ উঠে দেখে চার জন পুরুষের পাশে একজন মহিলার সিট, তখন তার কাছে অসহায় এতিম ছাড়া আর কি হতে পারে। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ প্রতিটি গাড়িতে মহিলাদের জন্য ভিন্ন আলাদা সিট করা, সেখানে পুরুষের সিটের মধ্যখানে মহিলা বসানো এটা খুব দুঃখজনক ছাড়া আর কি হতে পারে। এই সভ্য সমাজে এ রকম হবে তা আমি চিন্তাও করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমি লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি মহিলাদের জন্য ভিন্ন সিটের ব্যবস্থা করা হয়।

ইতিমধ্যেই গ্রীনলাইন ও এডভেঞ্চার নৌযান দুটি ভোলার মানুষের আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে তাদের সেবার মাধ্যমে। কিন্তু তাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে যেকোনো সময় মুখ থুবড় পড়তে পারে নৌপথের এই দিবা সার্ভিস দুটি। তাই নৌযান দুটির কর্তৃপক্ষদের এসকল সমস্যা দূরীকরণের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টজনরা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।