স্বামী-শ্বশুরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
দৌলতখানে কলেজ শিক্ষার্থী লাইজু হত্যার বিচার চেয়ে সহপাঠীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
ভোলার দৌলতখান মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও গৃহবধু লাইজু বেগমের হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে তার কলেজের সহাপাঠী ও শিক্ষকরা। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দৌলতখান বাজারে প্রায় ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা দৌলতখান বাজারের সদর রোডে বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন। এতে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে।
এসময় কক্তব্য রাখেন দৌলতখান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাবের হাসনায়ীন জাকির, লাইজুর সহপঠী মিনারা, সোনিয়া, তাসনুর প্রমূখ। এছাড়াও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচীতে লাইজুর বড় ভাই ইসমাইল শিকদার, চাচাতো ভাই মো. কামাল হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা কান্না ভেঙে পরে লাইজুর প্রতি স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজনের অতিতের অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। এসময় তারা জানান, লাইজুর হত্যাকারী তানজিলসহ জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এবং আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলার সকল আসামীদের গ্রেফতার করা না হলে তারা এর চেয়েও কঠোর কর্মসূচীর হুসিয়ারি দেন।
দৌলতখান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন মানববন্ধনে বলেন, লাইজু হত্যার বিচার চেয়ে তার স্বামী তানজির গোলদার এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করেন। পাশাপাশি তিনি সমস্ত কলেজ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ এর জন্য। এই ঘটনায় স্বামী শ্বশুরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ভোলা সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত গৃহবধূ দৌলতখান মহিলা কলেজের মেধাবী ছাত্রী লাইজু বেগমের ভাই ইসমাইল শিকদার।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, যৌতুকের কারণে ওই গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আসামিপক্ষ। ঘটনার পর আসামিরা পলাতক। নিহত গৃহবধূ কলেজ ছাত্রী নাম লাইজু বেগম তিনি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলা সদর থানার উপ-পরিদর্শক এসআই তোফাজ্জল হোসেন জানান, ওই মামলার ৭ আসামী হলেন গৃহবধূর স্বামী তার বড় ভাই তানভীর, বাবা তরিকুল ইসলামসহ সাতজন।
উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টায় দৌলতখান মহিলা কলেজের ছাত্রী ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের তানজির গোলদারের স্ত্রী লাইজু আক্তার এর লাশ বিছানায় পাওয়া যায়। এ সময় ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায় গৃহবধূ লাইজু আক্তার এর মাথায় বড় ধরনের জখমের দাগ রয়েছে। এছাড়া কান, কপাল, গলা, ঠোঁটের কোণে আগাতের চিহ্ন রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে আরো জানা যায়, ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোশারফ হোসেন মসু শিকদারের মেয়ে বিদ্যলয়ে পড়াশোনা করার সময় লাইজুর সঙ্গে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের তানজিল গোলাদরের প্রেম হয়। এটি প্রায় আড়াই বছর আগের ঘটনা। এসএসসি পাশ করার পরে লাইজু তার প্রেমের বিষয়টি বাবা-মাকে জানান। এরপর লাইজুর পরিবার তানজিল ও তার পরিবার স¤পর্কে খোঁজ-খবর নেন। ওই সময় তারা জানতে পারেন তার পরিবারের প্রভাবশালী হলেও তানজিল মাদকাসক্ত ও বেকার। এ কারণে লাইজুর পরিবার বিয়েতে রাজি হয়নি। পরে লাইজু ও তানজিল পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর লাইজুকে তানজিলের পরিবার মেনে নেয়নি। লাইজুর জীবনে নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন।
মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, বিয়ের কয়েক মাস পরই বেকার তানজিল লাইজুর পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের জন্য লাইজুকে মারধর শুর করেন তিনি। একপর্যায়ে তানজিল লাইজুকে তালাক দেন। বাধ্য হয়ে লাইজুর বাবা মা লাইজুকে নিয়ে যান। তবে তালাকের কিছুদিন যেতে না যেতে তানজিলা আবার লাইজুর সঙ্গে মুঠোফোনে স¤পর্ক গড়ে তোলেন। নিয়মিত কথা বলেন দুজন। দুই মাস আগে তানজিল লাইজুকে আদালতের মাধ্যমে আবার বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যান। দ্বিতীয়বার বিয়ের কয়েকদিন পরে তানজিল পরিবার আবারো লাইজুর উপর নির্মম নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। ঘটনার দিন তানজিল ও তার লাইজুকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তোফাজ্জল হোসেন জানান, গৃহবধূর লাশ ফেলে রেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। গৃহকর্মী ময়পুল বেগম পুলিশের কাছে বলেছেন, বিয়ের পর থেকে স্বামী তানজিল স্ত্রী লাইজুকে শারিরিক নির্য়াতন করতেন। ঘটনার দিনও লাইজুকে মেরেছেন। গৃহবধূ লাইজুর লাশ ঘরে রেখে আসামিরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের উপর সন্দেহ বারছে।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন জানান, লাইজু কিভাবে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করেছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা।