সর্বশেষঃ

ভোলায় উদ্বোধন হলো এম.ভি.এ্যাডভেঞ্চার-৫

দ্বীপ জেলা ভোলার যাত্রীদের সুবিধার্থে উদ্বোধন হলো বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়াটার বাস এম.ভি এ্যাডভেঞ্চার -৫ নামের একটি জাহাজ।

শুক্রবার (৩রা জানুয়ারি) সকালে দোয়া মিলাদের মাধ্যমে এম.ভি. এ্যাডভেঞ্চার -৫ উদ্বোধন করা হয়।
দোয়া মিলাদে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল মমিন টুলু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ মোশারেফ হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ইউনুস, এম.ভি এ্যাডভেঞ্চার -৫ এর মালিক নিজাম উদ্দিন সিআইপি, ঘাট ইজারাদার ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার্দী মাষ্টার, রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমান খানপ্রমুখ।
নতুন আঙ্গিকে ভোলা-ইলিশা-ঢাকা যাত্রা শুরু করেছে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল ক্যাটামেরান (ওয়াটার বাস) এ্যাডভেঞ্চার-৫। গতকাল ২ জানুয়ারী ঢাকা থেকে দুপুর আড়াইটায় ভোলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেন । আজ ভোরে দোয়া মিলাদের মাধ্যমে ভোলার ইলিশা থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যান। এর থেকে নিয়মিত একই সময়ে ওই নৌপথে চলাচল করবে। যাত্রীসেবার মান বাড়াতে দ্রুততার সাথে যাত্রীদের সঠিক সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌছে দিতে অত্যাধুনিক ইঞ্জিন পরিবর্তণ করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে পুরো নৌযানটি আরো ঢেলে সাজানো বলে জানিয়েছেন জাহাজ এ্যাডভেঞ্চার কর্তৃপক্ষ।
এ্যাডভেঞ্চার কর্তৃপক্ষ আরো জানান, টিকিটের সহজলভ্যতার জন্য ঢাকা, বরিশাল ও ভোলায় ৮টি অফিস খোলা হয়েছে । ঢাকার সদরঘাটের লালকুটির ঘাট (০১৮৭০-৭২৬০৫৮), কারওয়ান বাজারের কানাডা-বাংলা সিএনজি স্টেশন (০১৮৭০-৭২৬০৫৫), মহাখালীর আর্জবপাড়া (০১৮৭০-৭২৬০৫৭)ও রামপুরার মোল্লা টাওয়ার (০১৮৭০-৭২৬০৫৬) এবং বরিশালের প্যারার রোড ডা. নওয়াব ম্যানশনের ২য় তলায় (০১৮৭০-৭২৬০৫১), ভোলা সদর (০১৮৭০-৭২৬০৫২), ভোলার বাংলাবাজার (০১৮৭০-৭২৬০৫৪), লালমোহন (০১৮৭০-৭২৬০৫৩) থেকে যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে। এছাড়া যাত্রীরা যাতে সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে সে কথা মাথায় রেখে ভোলার কুঞ্জেরহাট, বোরহানউদ্দিন, হাকিমউদ্দিন উদয়পুর রাস্তার মাথা, লালমোহন, মনিরামপুর, গজারিয়া, কর্তারহাট, চরফ্যাশন, দুলারহাট, দক্ষিন আইচা, শশীভূষণসহ বিভিন্ন স্থানে শাখা অফিস পর্যাক্রমে খোলা হবে। বিলাসবহুল ও প্রযুক্তিনির্ভর এই নৌযানের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড।
যাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ, আরো আরামদায়ক ও সেবার মান বাড়াতে এ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটি নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করে তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতল নৌযানটিতে আসন সংখ্যা রয়েছে ৫৮৫টি। পুরো নৌযানটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সমুদ্রগামী জাহাজের আদলে তৈরি নৌযানটিতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে ক্যাফেটেরিয়া, নামাজের স্থান এবং ওয়াইফাই সুবিধাসহ রাখা হয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা। এ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানের আসনগুলো বিমানের সিটের আদলে তৈরি। এর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিদেশি পেশাদার ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের দিয়ে করিডোর, বারান্দাসহ ভেতরের বিভিন্ন অংশে নান্দনিক ডিজাইন ও ডেকোরেশন করানো হয়েছে। এসব নকশা ও কারুকাজে যে কারও মন কাড়বে।

এছাড়া ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো পুরো নৌযানটি। এর বাইরের দিকে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। সেখানে দাঁড়িয়ে নদী, পানি, আকাশ আর আশপাশের মনোরম দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীরা তার নিজস্ব আসনে বসেই বাইরের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি উপভোগ করতে পারবেন।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিলাসবহুল এই নৌযানটি নগরীর অদূরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ায় এলাকাসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী তীরে শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ডকইয়ার্ড ও খুলনা ডকইয়ার্ডে নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়। এ্যাডভেঞ্চার-৫ নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির তৃতীয় নৌযান।

এ্যাডভেঞ্চার-১ ও এ্যাডভেঞ্চার-৯ নামে আরও দুটি লঞ্চ বরিশাল-ঢাকা নদীপথে চলাচল করছে। গত তিন বছর পূর্বে এ্যাডভেঞ্চার-৫-এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নতুন করে নির্মাণ ও নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।

এ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটি ১৩২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৫২ ফুট দৈর্ঘ্য করা হয়েছে। প্রস্থ করা হয়েছে ৪৩ ফুট। এতে করে যাত্রী ধারণক্ষমতা এবং সুবিধা অনেক বেড়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌযানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) স্থাপন, বয়া, লাইফ জ্যাকেট ও নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের জন্য রয়েছে উন্মুক্ত ওয়াইফাই ব্যবস্থা। এতে চার ক্যাটাগরির আসন বিন্যাস করা হয়েছে।

নৌযানটির বিজনেস ক্লাস ৮০০ টাকা এবং ইকোনোমি ক্লাস ৬০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন থাকায় এ নৌযানটি ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীদের তার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। এ্যাডভেঞ্চার-৫ নৌযানটির হুইল হাউজে (চালকের কক্ষ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার-সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতির।

একইসাথে আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে নৌযানটির চলাচলরত নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘনকুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। জাহাজে কয়েক স্তর বিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। অর্থাৎ এ জাহাজটিতে সম্ভাব্য সবধরনের প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে। তিনি আরো জানান, নতুন এই লঞ্চ যাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নতুন একটা ধাপে নিয়ে যাবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, নৌযানটি যাত্রীদের চমকে দেবে। সব শ্রেণির ভাড়া যাত্রীদের আয়ত্বের মধ্যে রয়েছে।

নিজাম শিপিং লাইন্স লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরিশাল মেট্রোপলিন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, এফবিসিসিআই’র পরিচালক (সিআইপি) নিজাম উদ্দিন জানান, যাত্রীদের সেবায় নৌযানটি নিয়মিতভাবে চলাচল করবে। যাত্রীরা অত্যন্ত সুলভ ও নিরাপদভাবে তাদের যাতায়াত করতে পারবে

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।