সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ
ভোলায় ডাক্তার সংকট ॥ ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা
“হায়রে কপাল মন্ধ, চোখ থাকিতে অন্ধ” এ প্রবাদ বাক্যটি এখন আমাদের ২০ লাখ ভোলাবাসীর ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ ভোলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জনসহ ডাক্তার সংকটের ফলে এ অবস্থার কথা বলছেন অভিজ্ঞ মহল। ভোলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এ সংকট নিরসনে কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। কবে এ সংকট ঘুচবে তা জানে না কেউ। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবী জানাচ্ছে সচেতন ভোলাবাসী।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ রথীন্দ্রনাথ মজুমদার গত ৩০/১০/২০১৯ইং তারিখে অবসরে চলে যান। এরপর সদর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নিতানন্দ চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠ্যাৎ করে তাকেও গত ১৮/১২/২০১৯ইং তারিখে পদোন্নতি দিয়ে ঢাকায় সহকারী পরিচালক হিসাবে বদলী করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে আর.এম.ও ডাঃ তৈয়বুর রহমান দুটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন, যা সত্যি ভোলাবাসীকে অবাক করছে।
সূত্র জানায় ভোলার সিভিল সার্জনসহ ৭টি উপজেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর জন্য সৃষ্ট ২০৯ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ১১০ জন রয়েছে, বাকী ডাক্তার পদ শূন্য পড়ে আছে। তন্মধ্যে অন-অনুমোদিত ভাবে ২ জন ডাক্তার স্টেশনের থাকছেন না।
অন্যদিকে ভোলার আধুনিক হাসপাতাল নামে পরিচিত সদর হাসপাতালের ৫০ শয্যার জন্য সৃষ্ট ২২ জন ডাক্তার স্থলে ১০ জন আছে, ১২ জন ডাক্তার পদই শূন্য। চিকিৎসাসেবা সংকটে ভুগছে ভোলার রোগীরা। এ সংকট থেকে উত্তরনের জন্য কেউ উদ্যোগ নিচ্ছেন না। মাঝে মাঝে ডাক্তার সংকটের কারনে এম.বি.বি.এস ডাক্তারের পরিবর্তে একজন আর্য়ূবেদিক ও ইউনানী ডাক্তার দ্বারা ইমার্জেন্সীতে সেবা প্রদান করছেন। গুরুতর অসুস্থ্য রোগীদের এ হাসপাতালে ভর্তি না করে ব্রাদার ও ডাক্তাররা বরিশাল পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান কবে পাবে ভোলাবাসী তা কারো জানা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ভোলা সদর হাসপাতালের শূন্যপদগুলোর মধ্যে রয়েছে সিনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট নাক, কান, গলা একজন, জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি ০১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট রেজিওলোজিস্ট ০১ জন, মেডিক্যাল অফিসার ০৩ জন, ইএমও ৩ পদেই শূন্য এবং রেডিওলোজিস্ট ০১ জন, প্যাথলোজিস্ট ০১ টি পদও শূন্য। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ০২ জন এবং টিবি কিনিক এর কনসালটেন্ট ০১ জন, মেডিক্যাল অফিসার ০২ জন শূন্য পড়ে আছে। কবে নাগাদ এসব ডাক্তার পদগুলো পুরন হবে অফিস কর্তৃপক্ষ জানেন না।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা হিসাবে ভোলায় ডাক্তার সংকট থাকার কথা ছিল না। বিশেষভাবে ভোলার অভিভাবক জননেতা সংসদ সদস্য তোফায়েল আহম্মেদ ভোলাকে নিজের মতো করে সরকারী সকল দপ্তরের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। তারপরও অতীব জরুরী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোলাবাসী যা অকল্পনীয়। ইতিমধ্যে তোফায়েল আহমেদ ভোলার বাংলাবাজারে আজাহার ফাতেমা মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে হাত দিয়েছেন। সেই মুহুর্তে ভোলায় এতো ডাক্তার সংকট, সত্যি ভোলাবাসীকে অবাক করছে।
সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে ১৫ বছর পূর্বে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরনের ফলেও ১০০ শয্যার হাসপাতালের প্যাটানে সৃষ্ট ডাক্তার পদগুলো অজো পূরন হয়নি। ইতিমধ্যে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে রুপান্তিত করার জন্য ভবন নির্মাণ কাজও সমাপন্ন হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষকে ভবনটিকে ঠিকাদার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা রয়েছে জনবল কাঠামো নিয়োগ দেওয়াসহ কার্যক্রম শুরু প্রক্রিয়া। ডাক্তারসহ জনবল কাঠামো দ্রুত নিয়োগ দিয়ে ২০ লাখ ভোলাবাসীর চিকিৎসাসেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য দাবী জানিয়েছিলেন ভোলার জনগন।
সদ্যবিদায়ী সিভিল সার্জন ডাঃ রথীন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, সিএস এর দায়িত্ব পালনকালে চেষ্টা করেছিলাম ভোলাবাসীর চিকিৎসাসেবা যথাযথভাবে দেওয়ার এবং ২৫০ শয্যার ভবন বুঝিয়েও নিয়েছিলাম। এখন জনবলসহ অন্যান্য সেটাপ করতে পারলে ভোলার জনগন বহুমাত্রিক চিকিৎসাসেবা পাবে বলে আশা ব্যক্ত করছি।
ভোলা সন্তান আরেক সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ ফরিদ আহম্মেদ জানান, দায়িত্ব থাকা কালীন আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম ভোলার মানুষের চিকিৎসাসেবা দোর গোড়ায় পৌছে দেওয়ার। কিন্তু ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারনে সেবা পৌছে দিতে সক্ষম হয়নি। তবে ভোলার অভিভাবক সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ তোফায়েল আহমেদ এর সার্বিক সহযোগীতায় ২৫০ শয্যার ভবনটি নির্মাণসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আনতে পেরেছি। তোফায়েল আহমেদ এর সু-দৃষ্টি থাকায় দ্রুত আমরা ভোলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিবর্তন আসবে এবং ভোলার জনগন সু-চিকিৎসা পাবেন।
শুধু তাই নয় তিনি ভোলার বাংলাবাজারে আজাহার ফাতেমা মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করতে যাচ্ছেন। যার মাধ্যমে ভোলাবাসী অনেক উপকৃত হবেন। সর্বোপরি ভোলার চিকিৎসা সেবার জন্য দ্রুত ডাক্তার পদগুলো পুরন করাসহ তৃণমুল পর্যায়ে ডাক্তারদের সেবা পৌছে দেওয়ার জন্য ভোলাবাসী সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি সাংসদ তোফায়েল আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছে ভোলার ভুক্তোভোগী এবং সচেতন মহলরা।