নিজ জেলায় অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
বীরশ্রেষ্ঠ। বীরত্বের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে এই পদক দেওয়া হয়েছে । আর এ সাতজনের একজন ইঞ্জিরুম আর্টিফিশিয়াল মোহাম্মদ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর গানবোট ‘পলাশ’কে বাঁচানোর চেষ্টায় যিনি শহীদ হয়েছিলেন।
দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, নিজ জেলায় অবহেলিত থেকে গেলেন জাতীয় এই বীর সন্তান। দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ উপকূলীয় অক্সফোর্ড খ্যাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সমগ্র জেলায় যেমন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন অবহেলিত, ঠিক একইভাবে অবহেলিত নিজ জেলার সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপাঠেও।
প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পেরোতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর স¯্রাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। যার অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানে না নোয়াখালীতে একজন বীরশ্রেষ্ঠ আছেন। এটি অত্যন্ত লজ্জা এবং পরিতাপের বিষয়। শিক্ষার্থীদের এই না জানার পেছনের অন্যতম কারণ হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হল, ভবন বা ভাস্কর্য, কোথাও খুজে পাওয়া যায় না জাতির এই বীর সন্তানের নাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন কয়েকটি ভবন, একাডেমিক বিল্ডিং, লাইব্রেরিসহ পাঁচটি আবাসিক হল থাকলেও কোনোটির নামকরণেই ঠাঁই পায়নি এই বীরশ্রেষ্ঠের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অডিটোরিয়ামটির নামকরণও করা হয়েছে স্থানীয় এমপির বাবার নামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে এ কিউ এম সালাউদ্দিন পাঠান বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে আরো জানার জন্য তার নামে একটি বিশেষ স্থাপনা বা গবেষণাগার এখানে প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ। বীরদের স্মৃতি নিয়ে চর্চা তরুণদের এই দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগে আগ্রহী করবে।
বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা ইয়াছমিন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানানোর জন্য, অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকেই জানে না অনেকে।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তার দৌহিত্র সোহেল চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির নামই বীরশ্রে রুহুল আমিনের নামে হবার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার রাজনৈতিক ফ্যাসাদে আর হলো না। এ নিয়ে আমাদের কোনো আফসোস নেই। আজ হোক আর পঞ্চাশ বছর পর হোক, জাতি ঠিকই এই নামগুলো খুঁজে নেবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. দিদার-উল-আলম বলেন, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে একজন বীরশ্রেষ্ঠ যে জেলার, সেই জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে এত কিছু করা হলো কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন উনার নামে কিছু করা হলো না, সেটা আমাদের ব্যর্থতা। এটা নিয়ে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।