সর্বশেষঃ

বিজয়ের মাস শুরু

আজ রোববার থেকে শুরু হলো বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় মাস। এ মাসেই বাঙালি পেয়েছিল তার স্বাধীনতা, স্বাধীন ভূখণ্ড, মানচিত্র এবং পতাকা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম আর ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে আসে জাতীয় মুক্তি। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করেছিল বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আর বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিরাট এই অর্জনের পর বাংলা মায়ের বীর সন্তানদের ঋণ শোধের আন্তরিক চেষ্টাও হয়নি কোনো দিন। তবে ১৬ ডিসেম্বরের মতো জাতীয় দিবসে এখন তাদের কিছুটা খোঁজখবর করা হয়। তাইতো গাইতে হয় হয়তোবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না/বড়ো বড়ো লোকেদের ভিড়ে জ্ঞানী আর গুণীদের আসরে/ তোমাদের কথা কেউ কবে না/তবু হে বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না…।

প্রতি বছর এ সময় এক ধরনের জাগরণের সৃষ্টি হতে দেখি আমরা। দেশবোধটা যেন নতুন করে জেগে ওঠে। একই লক্ষ্য নিয়ে এবারও বিজয় দিবসের উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। সামনে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। মুজিববর্ষ। বড় দুটি উপলক্ষ সামনে রেখে ঢাকায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান সাজানো হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে এমন আভাস। সব কিছু ঠিক থাকলে উদ্যাপনের দিক দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ হবে এবারের বিজয় দিবস। জাগিয়ে তুলবে হাজারো প্রত্যাশা আগামী ভোরের সোনালি সূর্যের আলোয়।

ফিরে দেখা : ১৯৭১ সালের এই দিনেই মুক্তিযুদ্ধ সর্বাত্মক রূপ পায়—বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ নিশ্চিত হয়ে যায়। মুক্তি বাহিনীর কাছে দিন দিন কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। একের পর এক প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটতে থাকে তারা। শত্রুমুক্ত ঘোষণার পরও মুক্তি বাহিনীর অপারেশন চলতে থাকায় পাকিস্তানি সেনারা সিলেটের গারা, আলীরগাঁও এবং পিরোজপুর থেকে ব্যারাক গুটিয়ে নেয়। এই দিনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টের বক্তব্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য ফিরিয়ে নিতে ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান।

ওই সময় তৎপর ছিল স্বাধীনতাবিরোধীরাও। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আজম বৈঠক করেছিলেন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে। তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের দাবিটিও তুলেছিলেন। গোলাম আযম কমিউনিস্টদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন। এছাড়া মিত্রপক্ষ ভারতের হামলার প্রতিবাদে খুলনায় হরতাল পালন করেন শান্তি কমিটির সদস্যরা।

এই দিনে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গেরিলা সন্দেহে ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার অনেক যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের এই গ্রামটিতে অন্তত ৮৭ জনকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী। নারী, শিশুরা পর্যন্ত তাদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।