মুক্তিযোদ্ধার সনদ ‘ছিঁড়লেন’ চিকিৎসক, শাস্তি দাবি কাদের সিদ্দিকীর
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক শহীদুল্লাহ্ কায়সারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটলেও আজ সোমবার এ ঘটনায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তীব্র নিন্দা জানিয়ে ওই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
ঘটনাটি জানার পর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর মই থেকে পড়ে গিয়ে কালিহাতী উপজেলার মহেলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূইয়ার বাম পা ভেঙে ও কোমরের জয়েন্ট ফেটে যায়। পরে তিনি ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। শাজাহান ভূইয়া কাদেরিয়া বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। তার কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। কর্মজীবনে শাজাহান ভূইয়া মিল্ক ভিটায় চাকরি করতেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাজাহান ভূইয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ডাক্তার শহীদুল্লাহ্ কায়সার রাউন্ডে আমাকে দেখতে আসেন। আমার ফাইলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখে ডাক্তার রেগে গিয়ে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট এখানে কেন? সার্টিফিকেট চিকিৎসা করবে না আমরা চিকিৎসা করব।” এই বলে তিনি সার্টিফিকেটটি ফাইল থেকে ছিঁড়ে ফেলেন।’
কাদের সিদ্দিকীর নিন্দা ও জড়িত চিকিৎসকের বিচার দাবি
ঘটনাটি শোনার পর আজ সোমবার সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূইয়াকে দেখতে যান। তার খোঁজ-খবর নেন। এরপর কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার নারায়ণ চন্দ্র সাহা ও জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের কাছে ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানান।
এ সময় কাদের সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার ফাইল থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলা বাংলাদেশকে ছিঁড়ে ফেলার সমান। মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলেছে এ কথা শোনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া ভালো ছিল। এখন যদি ওই ডাক্তারকে জনগণ ছিঁড়ে ফেলে তাহলে কেমন হবে? শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের একজন ডাক্তার এই জঘন্ন কাজ করতে পারে এটা কেউই মেনে নেবে না। শুধু পাশ করলেই ডাক্তার হওয়া যায় না, ডাক্তার হতে হলে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হয়। ডাক্তারকে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এ ঘটনায় আমি মর্মাহত এবং তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। যদি কর্তৃপক্ষ ডাক্তার শহীদুল্লাহ্ কায়সারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয় তবে পরবর্তীতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র সাহা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন সাপেক্ষে ডাক্তার শহীদুল্লাহ্ কায়সারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কাদের সিদ্দিকীর কাছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছিঁড়ে ফেলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার পরিপন্থী কাজ। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ সময় কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা, জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসাইন মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক এটিএম সালেক হিটলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কে এই ডাক্তার শহীদুল্লাহ্ কায়সার
ডাক্তার শহীদুল্লাহ্ কায়সার টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অর্থো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ময়নমনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ছাত্রসংসদের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (সাচিপ) কার্যকরী সদস্য। শহীদুল্লাহ্ কায়সারের জন্মস্থান টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে।
গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ তালুকদার দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘শহীদুল্লাহ্ কায়সারের বাবা প্রয়াত ইয়ারুল্লাহ্ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার পুরো পরিবার আওয়ামী পন্থী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
এ বিষয়ে ডাক্তার শহীদুল্লাহ্ কায়সার দৈনিকআমাদের সময়কে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলি নাই। বিষয়টি মিডিয়ায় অন্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূইয়ার ফাইলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেখে আমি বলি ফাইলে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেন? ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে নিতে হয়, এখান থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সনদটি আপনার কাছে রাখেন। এই বলে আমি ফাইল থেকে পিন খুলে সনদটি তার হাতে দেই।’
শহীদুল্লাহ্ কায়সার আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ভূইয়া মনে কষ্ট পেয়েছেন। এটা শুনে আমি শনিবার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সামনে উনার নিকট দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমাকে পেশাগত ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে একটি মহল।’