আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় চার নেতা
আওয়ামী লীগের প্রায় সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলন শেষ। সম্মেলনেরই দিন প্রতিটি সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো থেকে বাদ পড়েছেন বিতর্কিত নেতারা। এবার মূল সংগঠনের কাউন্সিলের পালা।
আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এ উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে দলটি। সম্মেলন ঘিরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং ধানমণ্ডির দলের কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকে সবসময়। সেখানে ভিড় করা নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসছেন। বিশেষ করে দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসছেন সেটি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে এবার ব্যাপক রদবদল আনা হবে। কালিমালিপ্তদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নেতৃত্বে আনা হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যারা নিজেকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের অনেককে বাদ দেয়া হবে, আবার কাউকে কাউকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস মিললেও দলটির শীর্ষ পদে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এই পদের দাবিদার হিসেবে এখনও অদ্বিতীয় বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা। তার কোনো বিকল্প নেই আওয়ামী লীগে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা আর ভালোবাসার মূর্তপ্রতীক তিনি। বারবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা। এবারও তিনিই দলের সভাপতি থাকছেন তা নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগে দ্বিতীয় শীর্ষপদ সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি পদে শেখ হাসিনার আসাটা একরকম নিশ্চিত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে রয়েছে জল্পনা। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলের সবস্তরে এখন আলোচনা সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা নিয়ে।
এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলীয় সাধারণ সম্পাদককে সরকারের বাইরে রাখার একটি পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা আছে অনেক আগে থেকে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেয়ার পরিকল্পনা আছে। দল ও সরকার আলাদা করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদল আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এই পদে আনা হতে পারে সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন একজনকে, যিনি সরকারে নেই।
তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মাঝে বড় ধরনের অসুস্থতার ধকল কাটিয়ে এখন তিনি অনেকটাই স্বাভাবিক। আবারও তার এ পদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দ্বিতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকব কিনা, তা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার রানিংমেট হিসেবে নতুন কাউকে বেছে নিতে চাইলে কপাল খুলে যেতে পারে অন্যদের। সে ক্ষেত্রে নতুনদের মধ্যে আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও কেউ কেউ বলছেন। তবে চারটি নামের মধ্যে প্রথম দুটি (ওবায়দুল কাদের ও আবদুর রাজ্জাক) নামই বেশি আলোচিত হচ্ছে।
ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম গত সম্মেলনের সময়ও আলোচনায় ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন। দুই মেয়াদে মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তিনি।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের; যদিও কাউন্সিলররা বরাবরই এ দায়িত্ব তুলে দেন সভাপতি শেখ হাসিনার কাঁধে। তাই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
কাউন্সিলের শেষ দিন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়ে থাকে। কিছুটা সময় নিয়ে পরে পুরো কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন সেটি জানতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, পর পর দুবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার একাধিক নজির আছে দলটিতে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চারবার এ দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জিল্লুর রহমান চারবার এ দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুর রাজ্জাক দুবার করে ওই পদে ছিলেন।
সর্বশেষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওবায়দুল কাদেরও দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
সুত্র : https://www.jugantor.com/politics/247754