আজ হোক কাল হোক সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে: দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতির ব্যাপকতা রয়েছে-এ কথা আমি অস্বীকার করছি না। তবে তা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি সেক্টরেই কমিশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা হয়ত আজই সবাইকে ধরতে পারব না। তবে প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সবার মাঝে একটি বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছি যে, আজ হোক কাল হোক সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।
রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) গভার্নেন্স টিমলিডার এইজলিন বাকেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি সেবাখাত দুর্নীতিমুক্ত না হলে জনগণের হয়রানি কমবে না। তাদের হয়রানিও দূর হবে না। সেবা খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুদক কাজ করে যাচ্ছে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকে অনেককেই আসতে হচ্ছে, অনেককেই আসতে হবে। তবে দুর্নীতি দমনে সমন্বিত অঙ্গীকারের প্রয়োজন। কর্মপ্রক্রিয়ায় ব্যক্তি পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু কর্মপ্রক্রিয়ার পরিবর্তন সুশাসনের জন্য সত্যিই অন্তরায়।
তিনি বলেন, শুধু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নয়, কমিশন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করছে যাতে দুর্নীতির ঘটনা ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশনের অভিযোগকেন্দ্রের হটলাইনন-১০৬-এ লাখ লাখ অভিযোগ আসছে। অধিকাংশ অভিযোগ হয়ত কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তারপরও মানুষ তাদের অভিযোগ জানানোর একটি প্লাটফর্ম পেয়েছে। তারা তাদের কথা জানাতে পারছে। কমিশন থেকেও যতটা সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ জানানোর একটি মাধ্যম হিসেবে ১০৬ ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিনিধি দলটির এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ-পদোন্নতি-পদায়নে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না করা গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। শিক্ষকদের অনেক সময় সরকারি অন্যান্য কাজে সম্পৃক্ত করে তাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট করা হচ্ছে। শিক্ষকদের অন্য কাজে ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য তাদের ডিজিটাল উপস্থিতির ব্যবস্থা করার কথা সরকারকে বলেছি। মানসম্মত শিক্ষা না হলে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টি করা যাবে না।
নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সন্তানেরা যেন শুধু জিপিএ-৫-এর দিকে না ছোটে, নৈতিক মূল্যবোধের দিকেও ছোটে। মূল্যবোধহীন উন্নয়ন কোনো কাজে লাগে না। তাই আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে যাতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নৈতিকমূল্যবোধ গ্রোথিত করা যায়। সরকারি পরিষেবা দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত করা না গেলে জনগণের হতাশা দূর করা কঠিন। হয়রানিমুক্ত সরকারি পরিষেবা প্রদানে বিদ্যমান বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশন শিক্ষাসহ ২৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াগত সংস্কারের জন্য সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে এ জাতীয় ১৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে।
ডিএফআইডি সদস্যরা বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগসহ অন্যান্য দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮ সালে পুলিশ বিভাগের যে নিয়োগ হয়েছে তা যথেষ্ট স্বচ্ছ হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশের সঙ্গে কমিশনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশের যে সব সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এ সব তদন্তে পুলিশের তরফ থেকে সহযোগিতার কোনো ঘটতি নেই। শুধু পুলিশ নয়-প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হয়। বলতে গেলে সব সেক্টরেই কাউকে না কাউকে আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ডিএফআইডির গভার্নেন্স অ্যাডভাইজর তানভীর মাহমুদ, মোহাম্মদ ইউসুফ, দুদকের প্রশিক্ষণ ও আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম সোহেল প্রমুখ।