অপপ্রচারে কান দিবেন না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা দেখি, অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। আমি সবাইকে একটা কথা বলবো, এই অপপ্রচারে কান দেবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন অপপ্রচার বিশেষকরে পেঁয়াজ, লবণ প্রভৃতির সংকটের অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা করবে আমি জানি, এটা স্বাভাবিক। কাজেই সেটাকে মোকাবেলা করেই আমাদের চলতে হবে, আমরা সেভাবেই চলছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
দেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের পেঁয়াজ, লবন এবং চালের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সাম্প্রতিক অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৯ উপলক্ষ্যে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মাছ এবং সবজিসহ বিভিন্ন তরিতরকারীর উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং এখন জনগণের নিরাপদ খাদ্য এবং পুুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ মনযোগ দিচ্ছে। তিনি বলেন,‘আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করছি। জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে আমরা যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।’
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কাহিনী শিশু, নাতি-নাতনী এবং স্থানীয় জনগণের কাছে তুলে ধরার আহবান জানান। তিনি বলেন,‘আমরা সকল উপজেলাতে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স তৈরী করে দিচ্ছি। কাজেই সেসব অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের দলিল-দস্তাবেজ আর নষ্ট হবে না এবং আগামী প্রজন্মের শিশুরা যুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবে। তিনি আরো বলেন,‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানবে বাঙালি জাতি কখনো হারতে জানে না। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের আত্মমর্যাদার ধারণা তৈরী হবে এবং তাঁরা মাথা উঁচু করতে চলতে শিখবে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণে বলেন- বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ অতীতে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারে নাই এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছিল কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে তা আবার হারিয়ে ফেলে এবং দেশটি একটি হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের দেশের পরিনত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় ১৯টি ক্যু সংঘঠিত হয়েছিল এবং সশস্ত বাহিনীর বহু সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়। তিনি বলেন,‘মুক্তিযুদ্ধেও ইতিহাসকে ধ্বংস করার এবং জাতির পিতার নামকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘কিন্তু ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আমরা আবারো মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথাকে ফিরিয়ে এনেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের আকাশ যে রকম কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তা সরিয়ে তাঁর সরকার বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের জনগণকে নতুন করে আলোকিত করেছে। তিনি বলেন,‘যে সম্মান ১৯৭১ সালে দেশটি অর্জন করেছিল তা ১৯৭৫ সালে ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়। তবে, আমি এখন এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বের সামনে আবারো সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তাঁর উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শকে ধারন করে এবং তাঁর পদাংক অনুসরণ করেই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করেন।
সরকার প্রধান বলেন,‘ বাংলাদেশকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড় করিয়েছি এবং আমাদের অঙ্গীকার এই যে, আমরা অবশ্যই জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণেও সক্ষম হব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা কখনো বৃথা যেতে পারে না।
শেখ হাসিনা এ সময় জাতির সূর্য সস্তান মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনদের জন্য সম্ভব সব কিছু করে যাওয়ায় তাঁর সরকারের সংকল্পেরও পুনরোল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ এবং আর্থসামাজিক সমৃদ্ধিতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। আমরা তাঁদের সর্বোচ্চ মর্যাদা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশের সকল জেলা এবং উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সুরার মহান দায়িত্ব সশস্ত্রবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। তিনি বলেন, এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সশস্ত্রবাহিনীর দেশ পে”মিক সদস্যরা দেশ মাতৃকার নানাকাজ যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইন-শৃড়খলা রক্ষার কাজে তাঁদের সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করা অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এইজন্য আমরা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণ মুখী যেমন-আধুনিকায়ন, ভৌত এবং অবকাঠামোগত প্রভৃতি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানান।
তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন যে, সশস্ত্রবাহিনী বিপন্ন এবং অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য জনকল্যাণ মূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। বক্তৃতার শুরুতে শেখ হাসিনা সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্যদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, এইদিনে অকুতোভয় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা এবং দেশের সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমন শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন‘যে কারণে আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয় এবং আমরা স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনে সমর্থ হই।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযদ্ধের ৭ বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য এবং খেতাব জয়ী সশস্ত্রবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সম্মানীর চেক এবং উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের হাতে ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’ এবং ৯ জন সেনা সদস্য, দু’জন নৌবাহিনীর সদস্য এবং তিনজন বিমানবাহিনীর সদস্যদের হাতে শান্তিকালিন ‘বাহিনী পদক’ তুলে দেন।
সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষযক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মাদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সশস্ত্রবাহিনীর খেতাব জয়ী ১০১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবার-পরিজন এবং ৭ বীরশ্রেষ্ঠ’র নিকটাত্বীয়গণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।