গুজবে দিনভর লবন কেনার হিড়িক ॥ দেখা দিয়েছে কৃত্রিম সংকট

ভোলায় অতিরিক্ত দামে লবন বিক্রির অভিযোগে ১৫ ব্যাবসায়ীর জরিমানা

ভোলায় গুজবে দিনভর লবন কেনার হিড়িক পড়ে যায়। ভোলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গছে। যে যার মত, নিজের পরিমান অনুযায়ী লবন কিনে নিতে দেখা গেছে। এ সময় বেশি দাম চাওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে তর্ক-বিতর্কও হয়। শুধু তর্ক-বিতর্ক নয়, এমনকি হতা-হাতির ঘটনাও ঘটে কোন কোন স্থানে। এ নিয়ে পুরো ভোলা এক অস্থিতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে লবন বিক্রির অভিযোগে ১৫ ব্যাবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় তাদেরকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দিনভর লবন কান্ড সারাদেশের মত ভোলায়ও থাকে টক অব দ্যা ডিষ্ট্রিক্ট। দেখা দিয়েছে কৃত্রিম সংকট। তাই লবন কান্ড নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারে পাঠানো খবরে জানুন বিস্তারিত।
ভোলা : ভোলায় লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে খুচরা ও পাইকারী বাজারে ক্রেতাদের ভিড় জমে উঠে। এসময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে লবণ বিক্রি করায় অভিযোগে এক ট্রাক লবনসহ মো. হাসান নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। পরে ওই ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলার শহরের মহাজন পট্টির খাল পাড় ও গুরপট্টি এলাকায় এ ঘটনায় ঘটে।
ভ্রাম্যমান আদালরে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামাল হোসেন জানান, ভোলার বাজারে লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলার শহরের খালপাড় পাইকারী বাজারে খুচরা ও পাইকারী ক্রেতারা ভিড় করে লবণ কেনার জন্য। ওই সময় ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে লবণ বিক্রি করছে এমন সংবাদ পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে লবণ বোঝাই একটি ট্রাককে জব্দ করি। এছাড়াও নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে লবণ বিক্রি করার জন্য মোঃ হাসান নামে ১ ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। পরে ওই ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমান করে লবন ভর্তি ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হয়। এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাওসার হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


দৌলতখান  : আমাদের দৌলতখান প্রতিনিধি রোমানুল ইসলাম সোয়েব জানান, ভোলার দৌলতখান উপজেলায় নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে ৬ ব্যবসায়ীকে ৫২ হাজার টাকার অর্থদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত দৌলতখান বাজার এবং মেয়ারহাট ও নুরু মেয়ারহাট বাজারে এ অভিযান চলে। অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিতেন্দ্র কুমার নাথ। এ সময় অভিযানকে সাহায্য করেন দৌলতখান থানার (ওসি-তদন্ত) রফিকুল ইসলাম।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আজ (গতকাল) সন্ধ্যার পর থেকে দৌলতখান বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি বাজারে লবণের মূল্যবৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী কয়েক গুণ বেশি দামে লবণ বিক্রি শুরু করেন। প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকার লবণ ৪০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদেরকে জরিমানা করা হয়। এ সময় লবণ পরিবহন করায় দৌলতখান বাজারের মা স্টোর থেকে প্রায় ৩০০ কেজি লবণ জব্দ করে দোকানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এদিকে নির্ধারিত মূল্যের বেশী দামে লবন বিক্রি করলে প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।
বোরহানউদ্দিন : আমাদের বোরহানউদ্দিন সংবাদদাতা জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে লবণ বিক্রির দায়ে ২ ব্যবসায়ীকে ১৮ হাজার টাকার অর্থদন্ড করেছে। অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আকিভ ওসমান। এছাড়া অন্য একটি গ্রুপে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোলা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাহমুদুল হাসান বাজার মনিটরিং করেন। এসময় বোরহানউদ্দিন থানার ওসিসহ একদল পুলিশ সদস্যের টিম উপস্থিত ছিলেন।


লালমোহনে : আমাদের লালমোহন প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম দুলাল জানান. লালমোহনে হঠাৎ গুজব উঠে লবনের দাম বেড়ে গেছে আরও বৃদ্ধি পাবে। ১৯ নভেম্বর ২০১৯ইং এমন গুজবে লালমোহন বাজারের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী লবনের দাম ক্রয়মূল্যের চেয়ে তিন চার গুন বেশি দামে বিক্রি করতে থাকে। বিকালে লালমোহনের মধ্যবাজরের মুদি দোকানগুলোতে লবন ক্রয়ের জন্য পাবলিকের লাইন পরে যায়। ক্রেতার থেকে ব্যবসায়ীরা খোলা লবন প্রতি কেজি ৩৫/৪৫ টাকা, পেকেট লবন ৭৫/৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। খবর পেয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ভোলা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লবনের দাম বৃদ্ধির সত্যতা পেয়ে মেমার্স জিহাদ ষ্টোর মেসার্স জান্নত ষ্টোর, মেসার্স রাধিয়া ষ্টোর এবং মা ষ্টোরকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ধারা মেতাবেক ৪ দোকানদারের নগদ ১৯০০০ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া লালমোহন বাজারের জেনুইন ফামের্সীকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৭ ধারা মেতাবেক ৩০০০ টাকা জরিমানা করেন।

SONY DSC

চরফ্যাশন : আমাদের চরফ্যাশন সংবাদদাতা জানান, চরফ্যাশন উপজেলা সগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের বাজারগুলোতে ১শ’ টাকা কেজি দরে লবন বিক্রি করা হয়েছে। গুজবে ভর করে অতিরিক্ত মূল্যে লবন বিক্রির দায়ে ৩ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় চরফ্যাশন সদর বাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. রুহুল আমিন। পাশাপাশি নির্ধারিত মূল্যের বেশী দামে লবন বিক্রি করলে প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।
জানা গেছে. মঙ্গলবার সকাল থেকে হঠাৎ করে সব বাজারে লবনের কেজি ১শ’ টাকায় উঠে যায়। পিয়াজের মতো লবনের দাম আরো বৃদ্ধির আশংকায় ক্রেতারা বাজারে হুমরী খেয়ে পরে। মুহূর্তের মধ্যে বাজারে লবন সংকট দেখা দেয়। বিকেল ৫টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভিপির নেতৃত্বে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাজার তদারকীতে মাঠে নামেন। এসময় অতিরিক্ত দামে লবন বিক্রির দায়ে চরফ্য্যাশন বাজারের ব্যবসায়ী বাবুল, মো. সেলিম ও আলমগীর তিনজনকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মনপুরা : আমাদের মনপুরা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মামুন জানান, পেঁয়াজের উর্ধ্বগতির রেশ কাটতে না কাটতেই ভোলার মনপুরায় পেয়ে বসেছে লবণ আতংক। লবণের দাম বাড়ার আশংকায় মনপুরার ভোক্তাদের মাঝে চলছে লবণ কেনার হিড়িক। কেউ কিনছেন ১০ কেজি কেউবা ২০ কেজি। উপজেলার হাজীর হাট বাজার ঘুড়ে দেখা গেছে ক্রেতারের সবার হাতে লবন। শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ কেউ বাদ যাননি লবন কেনা থেকে। যেন সবাইকে পেয়ে বসেছে লবণ উন্মাদনায়।
উপজেলা সদর হাজীর হাট বাজারে লবন বিক্রিতে ব্যাবসায়ীদের মধ্যেও দেখা গেছে উদ্দীপনা। প্রথম দিকে পূর্বের মূল্যে লবন বিক্রি হলেও ক্রেতাদের ভীড় বাড়ার সাথে সাথে বেশী দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কোন কোন দোকানে গুড়া আয়োডিন লবণ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। উপজেলার রামনেওয়াজ বাজার ও চৌধুরী বাজরে লবণের কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।


এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লবণের উর্ধ্বগতিকে গুজব বলে এলাকায় ও বাজারে বাজরে মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি লবণের কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে বাজারগুলোতে লবণের দোকান ও গোডাউনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। লবণ আতংকে দোকানে দেখা গেছে লবণ নিয়ে কাড়াকাড়ি। রয়েছে উৎসুক জনসাধারনের উপস্থিতি। কেউ কেউ এটাকে গুজব বলে লবণ কেনা থেকে নিবৃত খাকছেন। ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদার ফলে ব্যাবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে পিঁয়াজের ঝাঁজ এসে লবণের গায়ে লাগবে বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহম্মেদ জানান, লবনের উর্ধ্বগতি একটি গুজব। এই গুজব সম্পর্কে জনসাধারনকে সচেতন করতে বাজারে বাজারে মাইকিং করা হয়েছে। লবণের কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে বাজারগুলোতে লবণের দোকান ও গোডাউনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। গুজব ছড়ানোর পিছনে যরা জড়িত তাদেরকে সনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

এসময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ সাধারণ মানুষদেরকে গুজবে কান না দেয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এরপরও যদি কেউ অতিরিক্ত দামে লবন বিক্রি করে তাহলে তাদের তথ্য প্রদান করারও অনুরোধ জানান।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।