লেখা থাকবো কি থাকবো না, সেটা আমরা জানিনা

নকল নবিসদের হেয়ালিপনার কারণে ভোলায় ঘটে যেতে পারে সামাজিক বিপর্যয়

আমরা তো মাস্টার রোলে কাজ করি। স্থায়ী কবে হইবো, আল্লায়-ই জানে। যত তাড়া-তাড়ি করে লিখবো, ততই লাভ। তাই তরল কালি রাইখ্যা শীশ কলম দিয়া লেখি। লেখা থাকবো কি থাকবো না, সেটা আমরা জানিনা। এভাবেই কথাগুলো অকোপটে স্বীকার করে গেলেন ভোলা সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের নকলনবিসরা। তারা জানে না, তাদের এ সামান্য লাভের কারণে আগামীতে ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
সুত্রে যানা গেছে, শত শত বছর ধরে জমি বেচা-কেনা, বায়না পত্র-দলীলসহ সকল প্রকার দলীল রেজিষ্ট্রি হওয়ার পর দলীল মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার আগে নকলনবিসরা বালাম বইতে লিখে রাখেন। যাতে করে ভবিষ্যতে দলিলের নকল উঠানো যায়। বালাম বইতে শতাব্দি ধরে তরল কালি দিয়ে লিখা হইতো; তাতে কোন সমস্যা ঘটেনাই। কিন্তু বর্তমানে কম দামের বলপেন দিয়ে লেখার পরই শুরু হয় নানান সমস্যা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ থেকে ১০ বছর আগে বালাম বইতে শীশ কলম দিয়ে লেখাগুলো অস্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু তরল কালি দিয়ে লেখাগুলো ঠিক আগের মতই রয়েছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভূয়া জমির দলিল তৈরী করে জমির মালিকানা দাবী করেন। কিন্তু যার কাছে জমি দাবী করেন তার হয়তো মুল দলীল হারিয়ে গেছে। সে যখন রেজিষ্ট্রি অফিসে দলীল উঠাইতে যায় তখন আর খুজে পাওয়া যায় না। তখনই হয় মারামারি, শালীস দরবার এমনকি মামলা।
মনপুরা থেকে আসা ৭০ উর্ধো আলমগীর বলেন, আজ এক সপ্তাহ যাবত ভোলা পড়ে আছি। ২০ হাজার টাকার মত খরচও করছি। এখনও দলীলের নকল উঠাইতে পারি নাই। সার্চার-রা বলেন, আমরা কি করবো, বালাম বইতে আপনার দলীলের লেখা বুঝিনা।
ভোলা পাটওয়ারী সমিতির সভাপতি সিদ্দিক মিয়া বলেন, আসলে আগে ইয়থ (তরল) কালি দিয়ে লিখতো। কিন্তু এখন কম দামের বলপেন দিয়ে লেখার কারণে বালাম বইতে অনেক লেখা বুঝা যায় না। তবে ৫ থেকে ১০ বছর পরে আর কিছুই খুইয্যা পাওয়া যাইবো না।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ ধরনের কান্ড জ্ঞানহীন আচরণের জন্য জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। এ সমস্ত দুষ্ট প্রকৃতির লোকজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবী করেছেন ভোলা সদর উপজেলা বাপ্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা।
ভোলা জেলা রেজিষ্ট্রার মোঃ সেলিম হাওলাদার ভোলার বাণীকে জানান, নকলনবিসদের যথেষ্ট পরিমান লিকুইট (তরল) কালি দেয়া হয়। তারপরও তারা কেন নিন্ম মানের বলপেন দিয়ে লিখে তা আমি জানি না। তবে আগের মত কালি দিয়ে লেখার সকল ব্যবস্থাই করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’র প্রফেসর মাকসুদ উল্লাহ হেলালী ভোলার বাণীকে জানান সব বলপেনের কালি এক রকম নয়। কিছু বলপেনের কালি আছে যথেষ্ট ভালো ও দামী, সেগুলো দিয়ে লিখলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাজারে নিন্ম মানের কালির যে সকল বলপেন রয়েছে তা দিয়ে লিখলে লেখা মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি তরল কালি দিয়ে লেখা যায় তা হলে খুবই ভালো হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।