পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরি ॥ অস্থির বাজার ॥ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নানা বাহানা ও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম প্রতিদিন বাড়িয়ে চলছেন ব্যবসায়ীরা। গত চার মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বেশ কয়েকবার। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে কখনো ৫০, ৯০, ১২০, ১৫০, ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। এবার তা ডাবল সেঞ্চুরি অতিক্রম করলো। বর্তমানে পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোলা ও লালমোহনসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে এমন দাম লক্ষ্য করা গেছে।
ভোলার কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন দোকানে গত কয়েকদিনে পিয়াজ বিক্রি করা হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই দাম এক লাফে ২০০ টাকায় উঠে যায়। প্রতিনিয় পিয়াজের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাসের উপক্রম হয়েছে। বাধ্য হয়েই ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে পিয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে ক্রেতারা আগে যেখানে ৫ কেজি কিনতেন, সেখানে এখন প্রয়োজন অনুযায়ী ১ কেজি কিংবা তার চেয়েও কম অর্থাৎ আধা কেজি কিনছেন। কেউ বা আবার দাম বেশী হওয়ায় পিয়াজ না কিনেই বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন।
ভোলা শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা নিজাম বলেন, আমি বাজারে গিয়েছিলাম পিয়াজ কিনতে। দাম বেশী হওয়ায় অল্প কিনে বাড়ী ফিরছি। এই দাম বৃদ্ধির পিছনে তিনি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। তিনি আরো বলেন, সরকারের উদাসীনতার কারণেই ব্যবসায়ীরা তাদের খাম-খেয়ালীপনার মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করছে। সাধারণ মানুষের আর যেন এ দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে না হয় সেজন্য সরকার পিয়াজের দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরুক এ দাবী জানিয়েছেন।
লালমোহনে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার লালমোহন বাজার ঘুরে এ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এতে ক্রেতাসাধারণ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পেঁয়াজের ঝাঁজে অস্থির বাজার। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে দাম।
বৃহস্পতিবার সকালে পেঁয়াজ কিনতে যান অপু হাসান। এ সময় পেঁয়াজের দাম শুনে অট্টহাসি হেসে তিনি বলেন, লালমোহনের উত্তরবাজার, মধ্যবাজারসহ প্রায় সব দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভুক্তভোগী আমরা এত দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছি।
দোকানদাররা চোখ বন্ধ করে ২০০ টাকা হাঁকাচ্ছেন কেজি। এক টাকাও কম নেই। পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে বাকবিতন্ডা করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ব্যবসায়ী সুভাস চন্দ্র বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় দাম বেড়েই চলেছে।
একই অবস্থা রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে। সেখানে এমন চিত্র দেখা গেছে। সেখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় দেশে পেঁয়াজ সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়তি। আর পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে গত চার মাস ধরে বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। সরকারিভাবে বাজার তদারকি হলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি আকারভেদে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ মানভেদে ৮০ থেকে ১৬০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা ও মিশরের পেঁয়াজ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজার, খিলগাঁও বাজার, মিরপুর এলাকার স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ কিনতে অনেকেই এখন ছুটছেন টিসিবির ট্রাক সেলের খোঁজে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে সেখান থেকে পেঁয়াজ নিয়ে ফিরছেন তারা। টিসিবির ট্রাক সেলে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।