বঙ্গবন্ধুর গার্ড অব অর্নার প্রদানকারী, লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সংগঠক ড. তাইবুন নাহার রশীদ কবিরত্ন
মিসেস টি. এন. রশীদ (তাইবুন নাহার রশীদ), কবিরত্ন বরিশাল জেলার ভোলা মহকুমার দৌলতখান থানায় ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভোলার লব্ধ প্রতিষ্ঠিত আইনজ্ঞ, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন জমিদার এবং প্রাক্তন এম. এল. এ খান বাহাদুর নুরুজ্জামান (এম.বি.ই মেম্বার অপ দি অর্ডার অফ দি বৃটিশ এমপায়্যার) এর কন্যা এবং ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট আবদু রশীদ এম. এ-র স্ত্রী। মিসেস রশীদ ১৯৪৮ সালে পি. ডব্লিউ. এন. জি’র পাকিস্তান মহিলা জাতীয় রক্ষীবাহিনীর কম্যান্ডার ও ক্যাপ্টেন পদে নিযুক্ত হন। খুলনা, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়ায় স্কুল-কলেজের মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং, ফার্ষ্ট এইচ ও নার্সিং ট্রেনিং দেন। তিনি যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও বরিশাল এই চার জেলার কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন। পরে তিনি নিখিল পাকিস্তান (আপেয়া) মহিলা সমিতির বিভিন্ন শাখার প্রতিষ্ঠাতা ও কর্মসচিব ছিলেন।
১৯৪৭ সালে জলপাইগুড়িতে মুসলিম মহিলা সমিতি ও ১৯৪২ সালে বাগেরহাট খুলনায় ডব্লিউ ভি. এস-র প্রতিষ্ঠা ও কর্মসচিব ছিলেন। খুলনা কর্ণেশন বালিকা বিদ্যালয় এর ডোনার, পাইওনিয়ার গার্লস স্কুলের সেক্রেটারী ও খুলনা জেলের অবৈতনিক জেল ভিজিটর ছিলেন। ১৯৫৪ সালে মহিলা আওয়ামীলীগের খুলনা শাখার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার ছিলেন। ১৫০ সালে গৌরবঙ্গ সাহিত্য পরিষদ তাকে কবিরতœ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৫২ সালে ভাষঅ আন্দোলনে বাংলা ভাষা কবিতা লিখে সরকারের রোষে পড়েন। তিনি বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ তাকে শ্রেষ্ঠ কমিতা লেখার জন্য সাহিত্য পদক দেন। তিনি লেখিকা সংঘের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১০ বছর বয়স থেকে ‘প্রতিদান’ নামে ছোচ গল্পের বই লিখে অনেক প্রসংশা কুড়িয়েছেন। মহিলা মাহে নও, সওগাত ও দিলরুবায় তার লেখা সমাদৃত হয়ে ছাপা হয়েছে। ১৯৬০ সালে বহু সাময়িকী, লোক সাহিত্য তার পরিচালনায় প্রকাশিত হয়। তার লেখা ‘একটু কিছু বলো’ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘আমি যদি মেঘ হতাম’ ছোট গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। দুই খন্ডে প্রকাশিত ‘মধ্যরাত’ তার লেখা উপন্যাস। তর লেখা বই ‘মহানায়ক’, ‘জীবন ক্ষুধা’, ‘বিস্মৃতি’, ‘পাষাণের কান্না’, ‘সন্ধ্যামালতি’ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
তিনি ঢাকা লায়নেস ক্লাবের ডিরেক্টর, ক্যান্টনমেন্ট লায়নেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও দুই বৎসর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মিসেস টি. এন. রশীদ বাংলাদেশ মহিলা সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি তাকে শ্রেষ্ঠ সমাজসেবী হিসেবে পুরস্কার ও মেডেল প্রদান করেন।
এছাড়া তিনি আরো বহু সমাজ সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছেন। মিসেস টি.এন. রশীদ বহু নাট্যমঞ্চে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছেন। সিরাজ-উদ-দৌলায় সিরাজের অভিনয় করে এবং শাহজাহানের ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। এসব টাকা পয়সা তিনি স্কুলে গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে দান করে দিয়েছেন। তিনি ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সমাজ সেবার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। বিশ্রাম কি জিনিষ তা তিনি ভুলে গেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিজেকে সমাজসেবার কাজে উৎসর্গীকৃত রেখে লেখার মাঝে জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত কাটিয়ে গেছেন।