বিপদ সংকেত ও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা মানছেনা ভোলার জেলেরা
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হচ্ছে উপকূল এবং নদীবন্দরগুলোতে। এই অবস্থা উপেক্ষা করে মেঘনায় মাছ শিকারে যাচ্ছেন ভোলার জেলেরা। শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ভোলায় মেঘনার তুলাতুলি, ভোলার খাল, মনপুরা পয়েন্টে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। সকাল থেকেই ছোট ছোট নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে নদীতে যান জেলেরা। তারা বলছেন, আকাশ মেঘলা থাকলে নদীতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে আমরা তীরে চলে আসব।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে উত্তাল হচ্ছে মেঘনাও। লাইফ জ্যাকেট, গাড়ির চাকার টিউব নৌকায় নিতে দেখা যায়নি জেলেদের। আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই নদীর পারে গিয়ে জেলেদের নিষেধ করেছি। তারা কোনো কথাই শুনছে না। আমরা কোস্টগার্ডের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।
আমাদের মনপুরা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মামুন জানান, ভোলার বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপকূলের জেলেরা ঘূর্ণীঝড় ‘বুলবুল’ এর মহাবিপদ সংকেত উপেক্ষা করে মেঘনায় মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। এদিকে শনিবার সকাল থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ মেঘনা পাড়ে গিয়ে সর্তক করতে নিজেরা মাইকিং করতে দেখা গেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসেনর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, জেলে প্রতিনিধিসহ সামাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সাথে দফায় দফায় মিটিং করে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়। তাছাড়াও উপজেলা থেকে বিচ্চিন্ন চরে অবস্থানরত সকল মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।
সরেজমিনে ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনায় হাজার হাজার জেলে নৌকা মাছ শিকারে ব্যস্ত। মৎস্য ঘাটের আড়তগুলো রয়েছে খোলা। এদিকে বিচ্ছিন্ন চরনিজাম ও কলাতলীর চরে অবস্থানরত ২০ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে এসে পৌছেনি। সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিসহ ধমকা হাওয়া বইছে।
চরনিজামের ইউপি সদস্য নুরনবী মুঠোফোনে জানান, রাতে রেডক্রিসেন্ট সদস্য সহ মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। তারপরও মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেনা। একই অবস্থা বিছিন্ন কলাতলীরচরে। এছাড়াও শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দীপকের উদ্যোগে মনপুরা উপকূলের সদর থেকে বিচ্ছিন্ন পশ্চিম পাশে শামসুদ্দিন চরে অবস্থানরত ১৮ পরিবারকে মূল ভূ-খন্ডে নিয়ে আসার জন্য ৩টি ট্রলার পাঠানো হয়েছে। ভোর থেকে উপকূলের বিভিন্ন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি আশ্রয় খোলা থাকলেও দুপুর ১ টা পর্যন্ত কোন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে খিচুড়ির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও কলাতলীর চর ও চরনিজামে অবস্থানরত স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নদীতে মাছ ধরা থেকে ফিরে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।