সর্বশেষঃ

বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন মুসলিমরা

বহুল আলোচিত অযোধ্যার বিতর্কিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। যেখানে আগে বাবরি মসজিদ ছিল, সেখানে তার আগে রাম মন্দির ছিল বলে দাবি করেছিল হিন্দু সংগঠন। এবার বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার জন্য মুসলিমদের জন্য মসজিদ নির্মাণে শহরের অন্য জায়গা পাঁচ একর জমি দানের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বাবরি মসজিদ নিয়ে দেওয়া রায়কে ‘অন্যায্য’ অভিহিত করে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন মুসলিমরা। ভারতের কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড আপিল করার চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী জাফারিয়াব জিলানি।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা অনায্য …আমরা এই রায় মানতে পারছি না। আমরা রায়ের সব অংশের সমালোচনা করছি না।’

তিনি বলেন, “সমস্ত জমি অন্য পক্ষকে দেওয়া ঠিক নয়। আমরা শীর্ষ আদালতকে সম্মান জানাই, আমাদের রায়ের সঙ্গে সহমত না হওয়ার অধিকার আছে। শীর্ষ আদালতে অনেক মামলারই রায় বদলে গেছে। এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানোর অধিকার আমাদের আছে”।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের বিশ্বাস, ভগবান রামচন্দ্রের জম্মভূমির ওপর তৈরি করা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে ওপর মসজিদ করা হয়েছে। এ মসজিদটি ভেঙে ফেলার পর সৃষ্ট হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ২০০০ এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ১০দিন পর, লিবারহেন কমিশন তৈরি করা হয় ঘটনার তদন্তে। ২০০৯-এ কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে নাম ছিল একে আডবানি, অটলবিহারী বাজপেয়ি এবং অন্যান্য বিজেপি নেতাদের, প্রায় ১৭ বছর পর শুরু হয় তদন্ত।

১৫২৮ সালে অযোধ্যায় তৈরি হয় এই বাবরি মসজিদ। হিন্দু সংগঠনের দাবি, একটি মন্দির ধ্বংস করে তার জায়গায় মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে। ১৮৫৩ সালে প্রথমবার এই জায়গাটিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়। ১৮৫৯ সালে ইংরেজ প্রশাসন ওই জায়গাটিতে হিন্দু এবং মুসলিমদের প্রার্থনা জন্য ফেন্স লাগিয়ে দেয়, প্রায় ৯০ বছর ধরে এটি ছিল। ১৯৪৯ সালে প্রথমবার জায়গাটিকে নিয়ে মামলা হয় মসজিদের পাশে ভগবান রামচন্দ্রের মূর্তি লাগানোর পর।

পরে ১৯৮৪ তে রামমন্দির নির্মাণের জন্য একটি কমিটি তৈরি করে হিন্দু সংগঠন। তিন বছর পর, পাঁচ দশক পর মসজিদের গেট খোলার নির্দেশ দেয় জেলা আদালত, এবং “বিতর্কিত নির্মাণের” পাশে হিন্দুদের প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালে মন্দির নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় “বিতর্কিত নির্মাণ” সংলগ্ন জায়গায়।

১৯৯০-এ তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবানি ওই জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য সমর্থন চেয়ে দেশজুড়ে রথযাত্রা বের করেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার অভিযোগ ওঠে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে।

২০০৩ এর সেপ্টেম্বরে, একটি আদালত জানায় যে, সাতজন হিন্দু নেতা, তারমধ্যে কয়েকজন বিজেপি নেতা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসে জন্য বিচারবিভাগের সামনে আসতে হবে। তবে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী আডবানির বিরুদ্ধে কোনও চার্জ আনা হয়নি। এক বছর পর, উত্তরপ্রদেশের একটি আদালত জানায়, আদালতের দেওয়া ছাড় পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

বিজেপি নেতা মুরলি মনোহর জোশী এবং উমা ভারতী বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু করে লখনউ আদালত। জুনমাসে, মামলার শুনানি করা বিচারকদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রায়দানের জন্য ৯ মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়।

২০০২-এর এপ্রিলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের ৩ বিচারপতির বেঞ্চ, কার হাতে জায়গাটি থাকবে সেই মামলার শুনানি শুরু করে। ২০১০ এর সেপ্টেম্বরে, রায়দান করে এলাবাহাদ হাইকোর্ট। সেখানে বলা হয়, বাবরি মসজিদকে তিনভাগে ভাগ করা হবে, একটি যাবে নির্মোহি আখরা, একটি রামলালা এবং অপরটি থাকবে উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের। একমাসের মধ্যে, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় হিন্দু ও মুসলিম সংগঠন।

২০১১ এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বেশীদিন নয়, শীর্ষ আদালত জানায়, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় আশ্চর্যজনক।

সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তিন সদস্যের দল মধ্যস্থতায় ব্যর্থ হওয়ার পর, ৬ অগস্ট দৈনিক শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। ৪০দিন শুনানির পর, ১৬ অগস্ট দৈনিক শুনানি শেষ হয়।

এদিকে, রায়ের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য ভারতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে সতর্কতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

অযোধ্যা মামলা নিয়ে যাতে কোনো গুজব ছড়ানো না হয়, সেদিকে নজর রাখতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের বৈঠকের পর বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় যা-ই হোক না কেন, এতে যেন দেশের শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয়। তিনি সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। ১০ নভেম্বর থেকে এই শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ। এই সান্ধ্য আইন অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার পর চার দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অযোধ্যার নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে ৪০ কোম্পানি আধা সেনা। উত্তর প্রদেশের ধর্মীয় জায়গাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।