ভোলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন নবীন
শিশুকে নগ্ন করে নির্যাতন, প্রবাসী মাকে ভিডিও পাঠিয়ে টাকা চাইতেন চাচা
বাবা হারা ছোট্ট দুই শিশুকে দাদা-দাদী আর চাচার কাছে রেখে জীবিকার তাগিদে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব গিয়েছিলেন সুমনা বেগম। আর যাওয়ার আগে সন্তানদের দেখাশোনার জন্য তাদের চাচাকে কিছু টাকাও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সৌদি আরব যাওয়ার দুই মাস যেতে না যেতেই তার সন্তানদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। টাকার দেওয়ার জন্য ৬ বছর বয়সী আপন ভাতিজাকে নগ্ন করে নির্যাতন করে সেই ভিডিও তার মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন চাচা স্বপন। ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার চরগাঁও গ্রামে।
ভুক্তভোগী শিশুর নাম জিসান। তার বয়স ৬ বছর বলে দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে জানিয়েছেন তার মা সুমনা বেগম।
জিসানের মা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেলেও আমি শ্বশুড়বাড়িতেই থাকতাম। সুমাইয়া (৮) নামে আমার আরও একটি মেয়ে রয়েছে। গত দুই মাস আগে আমি শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যাই। সৌদি আরব যাওয়ার আগে আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে দেবর ও শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে রেখে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য কিছু টাকাও দিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই আমার কাছে আমার দেবর স্বপন আরও টাকা দাবি করে। এরপর জিসানকে অমানুষিক নির্যাতন করে, তার ভিডিও করে সৌদি আরবে আমার কাছে পাঠায় স্বপন। পরে এই ভিডিও দেখে আমি গত শুক্রবার দেশে ফিরে আসি।’
জিসানকে নির্যাতনের সেই ভিডিও দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে দিয়েছেন সুমনা বেগম।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরের মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে গায়ে কোনো কাপড়ছাড়া ৬ বছরের শিশু জিসান। তার দিকে তেড়ে গিয়ে বাজে ভাষায় গালাগালি করতে করতে লাথি মারছেন অভিযুক্ত চাচা স্বপন।
এতে আরও দেখা যায়, চড়-থাপ্পড় এবং লাথি-ঘুষি মারার পরে স্বপন শিশুটির গোপনাঙ্গ ধরেও টান দিচ্ছেন। এরপর ওই শিশুটির দুই পা ধরে তাকে উল্টো দিকে ঝুঁলিয়ে আছাড় মারার ভয় দেখাচ্ছিলেন। তখন শিশু জিসান বার বার ‘ও মা’, ‘ও মা’ বলে চিৎকার করছিল।
সুমনা বেগম জানান, এখন তিনি তার দুই সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে তার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে যাওয়ার আগে দেবর স্বপনকে একটি রিকশা কিনে দেই এবং নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে যাই যাতে আমার সন্তানদের দেখে রাখে। বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্বপনকে একটি স্মার্টফোনও দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই মাস পার না হতেই আমার ছেলেকে মারধর করে সেই মোবাইল দিয়েই ভিডিও করে আমার কাছে পাঠায়।’
ভিডিও দেখে সুমনা বেগম সৌদি আরবে তার মালিকের কাছে কান্নাকাটি করলে চলতি মাসের বেতনসহ ওই মালিক তাকে দ্রুত দেশে পাঠান বলেও জানান তিনি।
দেশে এসে সুমনা বেগম স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে ওই ব্যাংকের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমেদ তার কাছে এত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসার কারণ জানতে চান। এরপর তিনি ওই ম্যানেজারকে কাঁদতে কাঁদতে পুরো ঘটনাটি বলেন এবং ভিডিওটিও দেখান।
এরপরই ব্যাংক ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সুমনা বেগমকে আইনি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।’
এরপরই কথা হয় শিশুটির মা সুমনা বেগমের সঙ্গে। পরে শিশুটির চাচা স্বপনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান জানান, তিনি এমন কোনো অভিযোগ বা ভিডিও পাননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।