নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারে নদীতে নেমেছে ভোলার জেলেরা

দীর্ঘ ২২ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত ১২টার পর থেকে ভোলায় শুরু হয়েছে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার। আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে মিলবে ইলিশ। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় ইতোমধ্যে কিছু জেলে রাতেই মাছ শিকারে নেমেছেন। আর যারা রাতের বেলায় মাছ শিকারে নামেননি তারা আজ থেকে নদীতে মাছ শিকারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন উপকূলের জেলেরা। আগের মত হাক-ডাকে সরগরম হয়ে উঠবে ভোলার মৎসঘাটগুলো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়বে মৎস্য আড়তদাররাও।
সূত্রে জানা যায়, এ বছর মা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ জেলার ১৪৭টি উপজেলায় ৪ লাখ আট হাজার ৩২৯টি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে আট হাজার ১৬৭ টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া জাটকা ধরা নিষিদ্ধকালীন আট মাস দেশের ১৭ জেলার ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত দুই লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারকে দেওয়া হয় ৪০ কেজি হারে চার মাসের জন্য প্রায় ৩৯ হাজার ৭৮৮ টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা। গত কয়েক বছরে দেশের সর্বত্র নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সুফল মিলেছে ইলিশের উৎপাদনে। নিষেধাজ্ঞার বাইরের সময়ে ইলিশ আহরণ বেড়ে যাওয়ায় জেলেদের পাশাপাশি লাভবান হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারাও।
গতকাল বুধবার দিনের বেলায় ভোলার বিভিন্ন মাছঘাট এলাকায় গিয়ে জেলেদের মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। সরেজমিনে জেলেদের কাউকে নৌকা মেরামত করতে ও কাউকে জাল ঠিক করার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। রাত ১২ বাজলেই নদীতে মাছ শিকারে বের হবেন এমন খবরে তাদের অনেকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়।
ভোলার তুলাতুলি ঘাটের জেলে ইউছুফ জানান, ২২দিন সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা নদীতে যাইনি। এখন অভিযান শেষে হচ্ছে। তাই জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখানে থাকা আরেক জেলে জানান, সরকার আইন করায় আমরা ২২ দিন মাছ ধরিনি। এখন অভিযান শেষ তাই মাছ ধরতে যাবো। আশা করি যে মাছ পাব তা দিয়ে সংসার চালিয়ে দেনা পরিশোধ করতে পারব।
দৌলতখানের বিভিন্ন মৎস্যঘাট ‘জেলে পল্লী’তে গিয়ে দেখা যায়, জেলেদের মধ্যে লেগে গেছে ব্যস্ততা। ইতিমধ্যেই বাজারসহ আনুসঙ্গিক কাজ সম্পন্ন শেষ। আজ মধ্যরাত হলেই তারা ট্রলারে বরফ ভরে নদীতে যাত্রা শুরু করবেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনেই নদীতে যাওয়ার জন্য নিজ নিজ ট্রলারে জাল উঠাচ্ছেন জেলেরা। সেইসঙ্গে বাজার করে ট্রলারের নির্ধারিত জায়গায় সংরক্ষণ করছেন। কেউ কেউ আবার দৌলতখান পৌর শহরের পাইকারি মুদি দোকানে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দৌলতখান দৈয়দপুর ইউনিয়নের ট্রলার মাঝি ভুট্টু বলেন, ‘১০ দিনের বাজার করা হয়েছে। রাত ১২টার পরই বরফ ভরেই মেঘনার জোয়ারেই ট্রলার ছাড়বো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। এখন থেকে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করতে পারবে। তাদের উপর এখন আর কোন বিধি নিষেধ নেই। তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বেশিরভাগ জেলে নদীতে না গিয়ে ওই সময়ে নৌকা ও জাল মেরামতে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। মহাজনসহ জেলেদের আন্তরিক সহযোগিতায় এবারের অবরোধ সফল হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।