মনপুরায় গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রেফতার

ভোলার মনপুরায় নির্জন চরপিয়ালে গৃহবধূকে গণধর্ষণের মামলায় আলোচিত সেই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাত ১ টায় উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের পূর্বপাশের বেড়ীবাঁধ এলাকা থেকে ওই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সোমবার দুপুর ১২ টায় আটককৃত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুলকে মনপুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরু মিয়ার আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি।
তবে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় অপর ৫ আসামী মোঃ বেল্লাল পাটোয়ারী (৩৫), মোঃ রাসেদ পালোয়ান (২৫), মোঃ শাহীন খান (২২), মোঃ কিরন (২৬) ও ধর্ষণে সহযোগিতায় স্পীডবোট চালক রিয়াজকে এই রির্পোট লেখা (রাত ১০টা) পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান ওসি শাখাওয়াত হোসেন।
এদিকে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ আলোচিত হারিচ রোকেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মীয় সহাকারি শিক্ষিকাকে ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত মামলার আসামী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনাম হাওলাদারকে আজও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও এই বছরের ৬ জুন আলোচিত অপর ধর্ষণ মামলার আসামী সরকারি ডিগ্রী কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব হোসেনকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। একে একে ঘটে যাওয়া আলোচিত দুই ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় জনমনে সন্দেহের দানাবাঁধে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ মামলায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ অপর ৫ আসামীকে আটক করবে না পুলিশ। অবশেষে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুলকে পুলিশ গ্রেফতার করায় সাধারন মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এই ধর্ষণের ঘটনায় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ফিরোজ, দুলাল, কবির, কামাল, রহমান, শাহাবুদ্দিন সহ অনেকে জানান, আগের ধর্ষণ মামলার মত এই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হবে বলে মনে করেছিলাম। তবে পুলিশ সাহসিকতার সহিত অভিযুক্ত আসামী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুলকে আটক করায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তারা। এছাড়াও আগের চাঞ্চল্যকর দুই ধর্ষণ মামলার আসামীদের আটক করার দাবীও জানান।
এ ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন জানান, ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে আটক করে সোমবার দুপুর ১২ টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আটককৃত আসামীর ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অপর ৫ আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানে চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় বাবার বাড়ি থেকে আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে গৃহবধূ মনপুরা যাওয়ার জন্য চরফ্যাসনের বেতুয়া লঞ্চ ঘাটে আসেন। ঘাটে এসে দেখে লঞ্চ ছেড়ে চলে গেছে। পরে স্পীডবোট চড়েন। বোটে দুইজন পুরুষ যাত্রী ছিলেন। পথিমধ্যে খালপাড় থেকে আরো দুইজন যাত্রী উঠেন। একপর্যায়ে ৪ যাত্রী স্পীডবোটটি জোরপূর্বক নির্জন চরপিয়াল নিয়ে যায়। পরে গৃহবধূকে চরে নিয়ে বাগানের মধ্যে গণধর্ষণ করে ওই চার যাত্রী। পরে স্পীডবোট চালক রিয়াজ স্পীডবোটটি চালিয়ে জনতা ঘাটে এসে মালিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুলকে জানায়। সাবেক সভাপতি একই স্পীডবোট করে চরপিয়াল যান। ওই সময় নজরুল ৪ ধর্ষণকারীকে মারধর করে তিন হাজার টাকা নিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে নজরুল ওই গৃহবধূকে চরের ভেতরে ধর্ষণ করে। পরে গৃহবধূকে ১ হাজার টাকা দিয়ে নিজের কাছে দুই হাজার টাকা রাখেন নজরুল। পরে ধর্ষণের ভিডিও ফেইসবুকে দিবে বলে হুমকী দেন নজরুল। এই ঘটনায় শনিবার রাতেই ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করে ওই গৃহবধূ।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।