সর্বশেষঃ

এমপিওভুক্তির জন্য টাকা থাকলেও পাওয়া যায়নি যোগ্য প্রতিষ্ঠান

চলতি অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এমপিওভুক্তির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকার পরও যোগ্য প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে, স্কুল ও কলেজের জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, এর প্রায় অর্ধেক টাকা থেকে গেছে। চলতি অর্থবছরে স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ ছিল ৮৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু এমপিও পাওয়া প্রতষ্ঠানের মধ্যে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা এক হাজার ৬৫১। তাদের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যোগ্য প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় ৪১৪ কোটি টাকা ব্যবহার করতে পারল না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে এক হাজার ৭৯টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ৪৩০ কোটি টাকা। আর এই বিভাগে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ ছিল ২৮২ কোটি টাকা। বাকি ১৪৯ কোটি টাকা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ সাপেক্ষে সমন্বয় করা হবে বলে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগকে একত্র করে ধরা হলে এমপিওভুক্তির জন্য মোট বরাদ্দ ছিল এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর যে পরিমাণ যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে তাদের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ৮৮১ কোটি টাকা। আর ২৬৬ কোটি টাকা অব্যয়িত থাকবে।
এমপিও নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী, একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি পেতে প্রধান চারটি শর্ত রাখা হয়েছে। এই চারটি শর্তের জন্য রাখা হয়েছে ১০০ নম্বর। একাডেমিক স্বীকৃতির তারিখের জন্য রাখা হয়েছে ২৫ নম্বর। প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর এবং ১০ বা এর চেয়ে বেশি বছর হলে পাবে ২৫ নম্বর। শিক্ষার্থী সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর। আর শিক্ষার্থীর কাম্য সংখ্যা থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান পাবে ১৫ নম্বর। এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য ৫ নম্বর। পরীক্ষার্থী এবং উত্তীর্ণের সংখ্যায়ও একইভাবে নম্বর বণ্টন করা হয়েছে।
কাম্য যোগ্যতা পূরণ করতে নীতিমালা অনুযায়ী, সহশিক্ষা ও বালক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ২০০, মফস্বলে ১৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। মাধ্যমিকে শহরে ৩০০, মফস্বলে ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। স্কুল অ্যান্ড কলেজে শহরে ৪৫০, মফস্বলে ৩২০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২০০, মফস্বলে ১৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। স্নাতক পাস কলেজে শহরে ২৫০, মফস্বলে ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর প্রতিটি শ্রেণির পরীক্ষায় শহরে ৬০ জন, মফস্বলে ৪০ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এক হাজার ৯৬৭ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুই হাজার ৭৩৯ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৩৬ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৪৪ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ৫৫৫টি ডিগ্রি কলেজের আবেদন পড়েছিল। মোট স্কুল ও কলেজের আবেদন পড়েছিল ছয় হাজার ১৪১টি। এর মধ্যে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে এক হাজার ৬৫১টি। বাকি চার হাজার ৪৯০টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিওভুক্তিকরণ ফাইলে লেখা হয়েছে, যেহেতু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৪১৪ কোটি টাকা অবশিষ্ট আছে, তাই এই অর্থ দিয়ে আবার যাচাই-বাছাই করে চলতি অর্থবছরেই আবারও এমপিওভুক্ত করা সম্ভব।
গত মঙ্গলবার এমপিও নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী এ বছরের এমপিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে বিদ্যমান এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হবে। পরিবর্তিত নীতিমালা অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিবছর এমপিও দেওয়া হবে।
এবার ৮৯টি উপজেলা থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানও পাওয়া যায়নি এমপিওভুক্তির জন্য। তবে এমপিও নীতিমালা ২০১৮-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, নারীশিায় অগ্রাধিকার, দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল ইত্যাদি বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ এবং স্বীকৃতির মেয়াদ দুই বছর ধরে এসব উপজেলা থেকে ৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আবার ৩১টি উপজেলা থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। আর ২৩টি উপজেলা থেকে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনই করেনি।
তবে এমপিওভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। তাদের দাবি ছিল, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে একযোগে এমপিওভুক্তি দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালার বাইরে কাউকে এমপিও দিতে রাজি হয়নি।
এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেছে, ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়ের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলারের প্রতিষ্ঠান খুলনা আইডিয়াল কলেজ। আর বিনয় ভূষণ রায়ের প্রতিষ্ঠান বরিশালের উজিরপুরের জল্লা আইডিয়াল কলেজ। অবশ্য ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা আট নেতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্তি পেয়েছে।
এমপিওভুক্তিতে অসংগতি : হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার শাহজালাল কলেজ ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট জাতীয়করণের পরও ওই প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি স্তরকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা এমপিওর আবেদন করেছিলাম গত বছরের জুলাই মাসে। আর জাতীয়করণ হয়েছে আগস্ট মাসে। কিন্তু তথ্য আপডেট না হওয়ায় আমাদের ডিগ্রি শাখা এমপিওভুক্তির তালিকায় চলে এসেছে। এ ছাড়া ভাড়া বাড়িতে অনেক প্রতিষ্ঠান চললেও সেগুলোও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। যেমন-রাজধানীর ন্যাশনাল কলেজ, নরসিংদী আইডিয়াল কলেজ ও নরসিংদী বিজ্ঞান কলেজ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।