আখেরী চাহার শোম্বাহ

বাংলা ইংরেজীতে যেমন করে ১২টি মাস রয়েছে তেমন করে আরবিতে ও ১২টি মাস রয়েছে। আরবীর ১২টি মাস কোন না কোন করনে প্রসিদ্ধ। তেমনি ভাবে আরবীর ১টি মাস হল সফর মাস। আর এ মাসের ও প্রসিদ্ধির একটি কারন আছে তা হল আখেরী চাহার শোম্বার।
আখেরী চাহার শোম্বার : বাক্যটি আরবী ও ফার্সি শব্দের মাধ্যমে গঠিত। আখেরী শব্দটি আরবী যার অর্থ হচ্ছে শেষ আর চাহার ফার্সি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে চার। সর্বেশেষ শোম্বাহ ও ফার্সি শব্দ অর্থ হল বুধবার। একত্রে আখেরী চাহার শোম্বাহ অর্থ হচ্ছে শেষ চতুর্থ বুধবার। রাসুল (সা:) অন্তীম মূহুর্তে ভীষন জ্বরে আক্রান্ত হন আর এদিনে (অর্থাৎ সফর মাসের শেষ বুধবার) কিছুটা সুস্থতা বোধ করে গোসল করেন। যার কারনে এ দিনটিকে শুভদিন হিসেবে গন্য করা হয় এবং মুসলমানেরা এ দিবস উদযাপন করে।
রাসূল (সা:) অসুস্থতার সুচনা : মৃত্যুর পূর্বে রাসূল (সা:) এর অসুস্থতার সুচনা হয়েছিল হযরত মায়মুনা (রা:) এর গৃহে —আবু মাশার (র) এ সিরাত গ্রন্থে বর্নিত আছে নবী (সা:) তখন যয়নব বিনতে জাহাশ (রা:) এর গৃহে ছিলেন। সুলাইমান তাইমীর সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে রাসুল (সা:) তখন রাইহানা (রা:) এর গৃহে ছিলেন। তবে ১ম বক্তবটিই সবচেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য। ইমাম খাত্তাবী (র) বলেন রাসুল (সা:) এর অসুস্থতার সুচনা হয়েছিল সোমবার কেউকেউ বলেন শনিবার। তিনি কত দিন অসুস্থ ছিলেন তা নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। জালালউদ্দিন সুয়ুতি (র) বলেন ১৩ দিন তিনি অসুস্থছিলেন রাহীকুল মাখতুমের ভিতর মোবারক পুরী বলেন ১৩ কিংবা ১৪ দিন।
একাদশ হিজরীর ২৯ শে সফর রোববার নবী (সা:) জান্নাতুল বাকিতে এক জানাযায় অংশগ্রহন করেন। কবর বাসীর জন্য দোয়া ও এস্তেগফার করলেন এবং ঘরে ফিরলেন। আয়শা (রা:) বলেন রাসূল (সা:) যখন জান্নাতুল বাকী থেকে ঘরে ফিরে আসলেন এবং দেখলেন আমি মাথা ব্যথায় কাতর হয়ে বলছি উহ মাথা গেল এ অবস্থা দেখে রাসুল (সা:) বললেন, হে আয়শা আমারই বরং মাথা গেল। তখন থেকেই রাসুল (সা:) এর অসুস্থতা শুরু হয়। (নবীয়ে রহমত ৪২৪+৪২৫)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্নিত তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সা:) এর কাছে গেলাম তখন তিনি ভীষন জ্বরে ভুগছিলেন। আমি তার গায়ে হাত বুলালাম এবং বললাম ইয়া রাসুল আল্লাহ্ আপনিতো প্রচন্ড জ্বরে ভুগছেন তিনি বললেন হা তাই আমি তোমাদের ২ জনের জ্বরের প্রচন্ডতা ভোগ করতেছি। (বিদা:নে ৫ম খন্ড ৩৯৩ পৃ:)
আরোগ্য লাভ : ইন্তেকালে ৫দিন আগে চাহার শোম্বার (বুধবার) নবী করীম (সা:) দেহের উত্তাপ অতিরিক্ত কঠিন হয়ে পড়ে এতে তার কষ্ট বেড়ে যায় এবং তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এ সময় বললেন- বিভিন্ন কুপের ৭ মশক পানি আমার উপর ঢালো আমি যেন লোকদের কাছে গিয়ে অসিয়ত করতে পারি। আয়শা (রা:) বলেল আমরা তাকে হাফসা বিনতে উমারের একটি বড় কাপড় ধোয়া পাত্রের কাছে বসিয়ে তার মাথায় প্রচুর পরিমানে পানি ঢাললাম। অবশেষে তিনি বললেন ব্যস যথেষ্ট হয়েছে। আর প্রয়োজন নেই এর পর নবী করীম (সা:) কিছুটা সুস্থ বোধ করলেন। সে দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ (আখেরী চাহার শোম্বাহ)। ( রাহীকুল মাখতুম-৫০৬ পৃ:)
কিছু কথা : বর্নিত আছে রাসুল (সা:) সুস্থ্যতা লাভ করায় সাহাবীগন আনন্দে দান করেন। হযরত আবু বকর ৭ হাজার দিনার, ওসমান (রা:) ১০ হাজার দিনার, হযরত আলী (রা:) ৩ হাজার দিনার এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। অনেক উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে মত বিরোধ করে আপত্তি তুলেছেন যে এটা বানোয়াট কথা। সর্বপরি আমি বলব সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা:) কে নিজেদের জানের চাইতে ও বেশি ভালবাসতেন। তাই রাসুল (সা:) সুস্থ্যতায় তারা খুশি হয়ে যে দান করেছেন এটা অবাস্তব কিছুই নয় এটা রাসুল (সা:) এর জন্য তাদের সামান্য উৎসর্গ বটে।
আখেরী চাহার শোম্বা পালন : রাহাতুল কুলুব ও জাওয়াহেরে গায়েবী কিতাবে বর্নিত আছে এই দিনে সকালে সূর্যদয়ের পূর্বে গোসল করা ও সূর্যদয়ের পর ২ রাকাত নফল নামায আদায় করা উত্তম। মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌবী তার মাজমুয়ায়ে ফতোয়া কিতাবে এই পদ্ধিতিতে গোসলের মাধ্যমে রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিদায়ের বেলাভূমিতে শুধু পাঠকদের কাছে এই আবেদন করবো কোরআন হাদীস ও উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে আখেরী চাহার শোম্বাহ পালনের তৌফিক দান করুক। (আমিন)

লেখক : মাওলানা মো: রাকিব হোসাইন
খতিব : সর্দার বাড়ী জামে মসজিদ, যুগীরঘোল, ভোলা।
সহকারী শিক্ষক : হোসাইনিয়া প্রিপারেটরী মাদ্রাসা, যুগীরঘোল, ভোলা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।