মা ইলিশ ধরে পাড়েই ৬শ টাকা হালি বিক্রি
শরীয়তপুরে অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন। প্রতিদিনই জেলেরা জাল ফেলছে নদীতে। ইলিশ নিধন ও বিক্রি যেন এখন মেলায় পরিণত হয়েছে পদ্মার পাড়ে। পদ্মা নদীর পারে দুর্গম এলাকায় শতাধিক স্থানে মা ইলিশ ধরে পদ্মার পাড়েই প্রকাশ্যে বেচা বিক্রি করছেন জেলেরা। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। কম বেশি প্রতিদিনই আটক করা হচ্ছে জেলে নৌকা ও মাছ। চলছে জেল জরিমানাও। তারপরেও পদ্মা নদীতে অব্যাহতভাবে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা।
জেলা মৎস কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রজনন মৌসুম হিসেবে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকার, পরিবহন, ক্রয় বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এ সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে জেলেদের। তারপরও থেমে নেই জেলেদের মাছ ধরা। একদিক দিয়ে প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে তো অন্যদিক দিয়ে জাল ফেলছে জেলেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শরীয়তপুরের গোসাইর হাট থেকে জাজিরা পর্যন্ত এভাবেই পদ্মা নদীতে দিন রাত মাছ শিকার করছে জেলেরা। শত শত নৌকা ও ট্রলার দিয়ে নদীতে মাছ শিকার যেন এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। জেলেদের ধরা মাছ বিক্রি হচ্ছে পদ্মার পারে দুর্গম এলাকায়। কম দামে ইলিশ মাছ কিনতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। প্রশাসনের নজর এড়াতে অভিনব কায়দায় (ট্রাভেল ব্যাগ) ব্যবহারের কাপড় চোপড় আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ব্যাগে করে ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। মাত্র ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় মিলছে এক হালি (চারটা) ইলিশ। যা কয়েক দিনপরেই বাজারে বিক্রি হবে তিন থেকে চার হাজার টাকায়।
শুক্রবার বিকেলে জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি দূর্গারহাট এলাকার পদ্মার পাড়ে কথা হয় রশিদ খাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা পদ্মায় মাছ ধরি। মাছ না ধরলে কি খাব? পদ্মায় মাছ ধরি পাড়ে নেমে বিক্রি করি। এ সময় ইলিশ মাছ বেশি পাওয়া যায়। আয়ও বেশি। চারটি ইলিশ প্রতিটি এক কেজি করে, দাম এক হাজার টাকা। মানুষ ইলিশ কিনে মেইন রোড দিয়ে যায় না। বিকল্প রোডে যায়। কারণ মেইন রোডে পুলিশ টহল দেয়।
বড়কান্দি দূর্গারহাট এলাকায় কাজিরহাট এলাকা থেকে মাছ কিনতে আসা মো. ইকবাল বলেন, আমি ২০ হালি ইলিশ কিনেছি। প্রতি হালি ইলিশ ৯০০ টাকা করে কিনেছি।
কাজিয়ারচর গ্রামের ছাত্তার মাদবর বলেন, প্রশাসনের লোকজনের চোখের আড়ালে মাছ শিকার করতে হয়। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন আসতে দেখলে অনেক সময় জাল ছেড়ে দিয়ে জেলেরা চলে আসে। আমার একটি নৌকা রয়েছে। ভরা মৌসুমে মাছ ধরতে না পারলে সারা বছরের লোকসান গুনতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকার করছি। পুলিশ এলে সব লোকজন মাছ ফেলে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
আরেক মাছ ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, পুলিশের নজর এড়িয়ে মাছ বেচা কেনা করতে হয়। পদ্মার পাড়ে এ রকম দুর্গম অঞ্চলে অন্তত শতাধিক স্থানে মাছ বেচা কেনা হচ্ছে। পুলিশ এলে আমরা পালিয়ে যাই। সরকারের দেয়া খাদ্য সহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদেই মাছ শিকার করছি।
শরীয়তপুরের জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, প্রতিদিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত আটদিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক জেলেকে আটক করা হয়েছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও নগদ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। ইলিশ নিধনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা একদিক দিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে অন্যদিক দিয়ে জেলেরা নেমে যাচ্ছে।