আবরারের মতো আমাকেও টর্চারসেলে নির্যাতন করেছিল ছাত্রলীগ : মশিউর রহমান

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষপ্র”তিষ্ঠানের টর্চার সেলের খবর প্রকাশ পাচ্ছে। ভুক্তভোগী অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে বিশেষ নানা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মশিউর রহমানের নানা নির্যাতনের চিত্র ইতিমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বিবিসিকে দেয়া তার আলোচিত বক্তব্যগুলো পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার মেধাকে নষ্ট করে দিয়েছে, আমার স্বপ্নকে, আমার টেম্পুচালক বাবা-মায়ের স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছে। আমার মতো লাখ লাখ ছেলে-মেয়ের স্বপ্নকে আজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টর্চারসেল, গেস্টরুম, গণরুম এবং ছাত্রলীগের পেটুয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নষ্ট করে দিয়েছে। আমিও এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার’দা সূর্যসেন হলে থাকতাম। আবরারের সঙ্গে যেটা হয়েছিলো, সেটা আমার সঙ্গেও করা হয়েছিল। টর্চারসেলে নিয়ে আমাকেও নির্যাতন করা হয়েছিল। কপাল ভালো বলে বেঁচে আছি।
আমার বাবা-মা, আবরারের বাবা-মাসহ হাজার হাজার বাবা-মায়ের অভিশাপ লাগবে ছাত্রলীগ নামক সংগঠনে। আজকে ছাত্রলীগ পরিণত হয়েছে একটি অভিশপ্ত সংগঠনে। আমাদের জীবন শেষ করে দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের মিছিলে লোকবৃদ্ধি করে, ছাত্রলীগের ঐ মিছিল অভিশপ্ত মিছিল। আমার এমনও দিন গিয়েছে যে, সারা রাত কান্না করে তারপরে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার হলে গিয়েছিলাম। আর যেন এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কাউকে যেতে না হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেও আমরা জানতামনা যে বুয়েটে এত জঘন্য ছাত্ররাজনীতি আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে গ্রাম থেকে আসে। প্রথমবর্ষে ছাত্রলীগ আমাকে ৬-৭ দিন পিটিয়েছে, চড়থাপ্পর দিয়েছে, কান ধরিয়েছে, চৌকির তলায় ঢুকিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমি সক্রিয় ছিলাম। ৩০ জুন সূর্যসেন হলের ২৩৮ নম্বর কক্ষে ছিলাম। সে দিন দেশের বাড়ি থেকে হলে এসেছি। তখন সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ নেতা সপু এবং রিয়েল আমাকে তাদের মোটরসাইলেকে তুলে নিয়ে চারুকলায় নিয়ে গিয়ে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রড ও লাঠি দিয়ে ৬-৭ মিলে নির্যাতন করে। নির্যাতনের সময় আমার হাত পা ও চোখ তারা বেঁধে রেখেছিল।
আমি যখন অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে যাই তখন তারা আমার সকল বাঁধন খুলে দিয়ে বলে আমরা তোকে কিছু কথা শিখিয়ে দেবো। আমাদের শিখিয়ে দিয়ে কথা না বললে তোকে জানে মেরে ফেলবো। তখন তারা জোরপূর্বক আমাকে নিয়ে কিছু ভিডিও তৈরি করে যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলো।
নির্যাতনের পর তারা শাহাবাগ থানার পুলিশের কাছে দিয়ে আসে। সেখান থেকে আমাকে কোর্টে চালান করে। এরপর আমাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং ২ মাস পরে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছি। এখনও মামলা চলমান। সূর্যসেন হলের সভাপতি সরোয়ার সরো বলেছিল- তুই যদি জীবনে বেঁচে থাকো আর কারাগার থেকে মুক্ত হও তবে তোকে যেন কখনও সূর্যসেন হলের চর্তুসীমানায় আর না দেখি। সেই সরোয়ার সরো এখনও সূর্যসেন হলের সভাপতি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এরকম নির্যাতন করা হয়। ছাত্রলীগের মতের সঙ্গে না পড়লে শিবির বলে আখ্যায়িত করে নির্যাতন শুরু করে তারা।

সুত্র : https://www.jugantor.com/national/233673

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।