বাংলাবাজার আঞ্চলিক যুবদলের উদ্যোগে আলোচনা সভা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
আরেক দফা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে ২০ দলীয় জোট!
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে টানাপোড়েন বেড়েই চলেছে। ঐক্যের পরিবর্তে জোটটির শরিকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অনৈক্য। যা দিন দিন প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। জোটের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না শীর্ষ নেতারা।
এমনকি ঘোষিত কর্মসূচিতেও তাদের দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জোটের এক অনুষ্ঠানে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমসহ শীর্ষ নেতারা ছিলেন অনুপস্থিত।
জোটটির একাধিক নেতার অভিমত, বিএনপির ‘একলা চলো নীতি’, ঐক্যফ্রন্টকে প্রাধান্য দেয়া এবং সর্বশেষ কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনকে কেন্দ্র করে এ টানাপোড়েন শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে জোট আরেক দফা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের।
সূত্র জানায়, গত জাতীয় নির্বাচনের পর জোটের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জোটের প্রধান শরিক বিএনপি দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দেয়। শরিকদের বাদ দিয়ে ‘একলা চলো নীতি’ অনুসরণ করে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলগতভাবে কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু না থাকায় জোটের কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। কিন্তু বুয়েট ছাত্র আবরার ইস্যুতে দলের পাশাপাশি জোট ও ফ্রন্টকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।
এ ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় থাকতে নেয়া হয় নানা পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘ চার মাস পর জোটের বৈঠক ডাকা হয়। বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা হয়।
কিন্তু সেই বৈঠকে জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদসহ অনেকেই উপস্থিত হননি।
অতীতে দলের শীর্ষ নেতা না থাকলে মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদক বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করতেন। কিন্তু গত বৈঠকে তাদের দেখা যায়নি।
দলের চতুর্থ সারির নেতাদের বৈঠকে পাঠানো হয়। এ নিয়ে বৈঠকে শরিকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত বলে তারা মত দেন।
যেদিন জোটের বৈঠক চলছিল সেদিন বিকালেই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অলি আহমেদ। সেখানে সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জোটের বৈঠকের দিন অলির সংবাদ সম্মেলন নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। জোটকে চ্যালেঞ্জ করেই তিনি এসব করছেন বলে তারা মনে করছেন। এমন পরিস্থিতিতেও বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা ছিল বৈঠকে না এলেও জোটের কর্মসূচিতে তারা উপস্থিত থাকবেন।
কিন্তু মঙ্গলবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে তারা উপস্থিত হননি। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির প্রতিবাদে বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নেবে শরিকরা।
কিন্তু নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দেখা যায়নি। এ নিয়ে অনেকে আরও হতাশ হন। জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সভায় শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাওয়া উচিত বলে তারা মত দেন। এভাবে টানাপোড়েন বাড়তে থাকলে জোটে আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে জোট ছাড়ের বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। তাকে জোটে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম যুগান্তরকে বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তাই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি।
দলের অন্য নেতাদের বৈঠকে পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব সময় আমার যেতে হবে এমন নয়। অন্য নেতাদের পাঠাই যাতে তারা রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব হয়।
তিনি বলেন, আমরা ২০ দলে ছিলাম, আছি এবং থাকব। ২০ দলের ভেতর থেকেই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
জোটের শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন জোটের কার্যক্রম ছিল না।
আবরার ইস্যুতে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। কিন্তু এতে জোট শরিকদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতা উপস্থিত না হওয়ায় অনেকেই বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।
কেন তারা আসেননি তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি মনে করি তারা জোটের বৈঠক ও কর্মসূচিতে অংশ নিলে ভালো হতো।
জানা গেছে, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের জাতীয় মুক্তি মঞ্চ গঠনকে কেন্দ্র করে মূলত ২০ দলীয় জোটে টানাপোড়েন শুরু হয়। জোটের ভেতর থেকে তারা একটি জোট করার উদ্যোগ নেয়।
যা ভালোভাবে নেয়নি বিএনপিসহ আরও কয়েকটি শরিক। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে না অভিযোগ তুলে ২৭ জুন আলাদা ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র ঘোষণা দেন।
তার মঞ্চে জোটের শরিক জামায়াত, কল্যাণ পার্টি, জাগপাসহ ছোট কয়েকটি দলও যুক্ত হয়। এ নিয়েও চরম ক্ষুব্ধ বিএনপি। তারা মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নিয়ে এসব করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা সরকার পতনের জন্য আলাদা ফ্রন্টের প্রয়োজন নেই। জোটের ভেতর থেকেই এটা করা সম্ভব। কিন্তু বিএনপির এমন আহ্বানে সাড়া না দিয়ে অলি আহমেদ আলাদা ফ্রন্ট দাঁড় করান। এ নিয়ে জোটের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম যুগান্তরকে বলেন, ২০ দলীয় জোট কখনও সক্রিয় হয়, আবার নিষ্ক্রিয় হয়। সম্প্রতি একটি ইস্যুতে জোটকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।
তবে কি কারণে শীর্ষ নেতারা জোটের কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি তা বলতে পারব না। তা ছাড়া আমি ব্যক্তিগত কাজে কয়েকদিন দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে কিছু বলতেও পারব না।
তিনি বলেন, অতীতে জোটের কর্মসূচিতে শীর্ষ নেতারা যেতে না পারলে আমাদের পাঠাতেন। কিন্তু গতকালের কর্মসূচিতে যাওয়ার ব্যাপারে দল থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।